শিল্পায়নবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে

প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, দেশে শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে এবং শিল্পায়নবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। শিল্পায়ন বাড়লে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি হবে। করদাতার সংখ্যা বাড়লে দেশের উন্নয়নে আরো অবদান রাখা যাবে। তিনি আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) বাজেট প্রণয়নে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে এ সভার আয়োজন করা হয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে ১৮৯টি প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া করদাতার সংখ্যা বাড়াতে শিল্পায়নবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

মতবিনিময় সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। মুখে আমরা অনেককিছু বলি, বাস্তবে তা ধারণ করতে পারি না। দেশে এখনো অনেক ব্যবসায়ী ঠিকভাবে কর দেয় না। মাঝেমাঝে কিছু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে করফাঁকির অভিযোগ উঠে। তবে এটা ঠিক যে দেশে দিন দিন করদাতার সংখ্যা বাড়ছে। ২০২০-২১ সালে করদাতার সংখ্যা ছিল ২০ লাখ, ২০২১-২২ সালে সাড়ে ২২ লাখ, ২০২২-২৩ সালে দেশে সাড়ে ৩১ লাখ ছাড়িয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বৃহত্তর চট্টগ্রামে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পপার্ক, বঙ্গবন্ধু টানেল, বে-টার্মিনালসহ মেগা প্রকল্পগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করার জন্য আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানান। এ সময় তিনি আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে চেম্বারের পক্ষ থেকে শুল্ক সংক্রান্ত ৯০, ভ্যাট সংক্রান্ত ৩৬ এবং আয়কর সংক্রান্ত ৫৪ এবং অন্যান্য ৯টিসহ ১৮৯টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এবং স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আয়কর দাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করে রাজস্ব আয় বাড়ানো উচিত। বর্তমানে দেশে যে সংখ্যক টিনধারী রয়েছেন তার অর্ধেকেরও বেশি রিটার্ন দাখিল করেন না। তাই এই সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য স্বল্প জরিমানায় অন্ততপক্ষে আগামী অর্থবছরে একটি সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে দ্রব্যমূল্যসহ জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি ব্যক্তিপর্যায়ে করসীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, পরবর্তী ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৫ শতাংশ, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ, ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং তদূর্ধ্ব ২৫ শতাংশ হারে নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

শুল্কের এইচ এস কোড নিয়ে তিনি বলেন, ‘এইচ এস কোড জটিলতার ফলে বিভিন্ন রকম শুল্ক জরিমানা এবং সময়ক্ষেপণের কারণে আমদানিকারকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক এইচএস কোড নির্ণয় করা জটিল হয়ে পড়ে এবং ভুলভ্রান্তি এবং তৎপরবর্তী জরিমানার প্রসঙ্গ চলে আসে। এই জটিলতা নিরসন করা অত্যন্ত জরুরি। পণ্যের বিবরণ সঠিক থাকলেও এইচএস কোডে সামান্য ভুলের কারণে প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা- এটি মোটেও যৌক্তিক নয়। এটি সংশোধন জরুরি।’

ভ্যালু অ্যাডেট ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ অনেক দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। তাই স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করেন।

এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চেম্বার সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক, ড. সামস উদ্দিন আহমেদ ও জাকারিয়া সুলতানা। চট্টগ্রাম চেম্বার সহসভাপতি ও প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ২০৪১ এর মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পাশাপাশি ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা নিরসনে আসন্ন বাজেটে অন্তভুক্তিকরণের জন্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্লাব ১৫ লক্ষ পর্যন্ত ০ শতাংশ, ১৪ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ পর্যন্ত ১ শতাংশ, ২৫ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ পর্যন্ত ২ শতাংশ, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ৪ শতাংশ, এবং ৫ কোটির ঊর্ধ্বে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন।

এনবিআরের সদস্য মো. মাসুদ সাদিক বলেন, ‘২৬ জনের মত ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের কিছু প্রস্তাব সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রস্তাব রাখা যতটা সহজ তা বাস্তবায়ন করা ততটা সহজ না। সুতরাং এখানে আমাদের সক্ষমতার হার বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ীদের ভ্যাট কমানোর বিষয়টি আমরা বিবেচনা করে দেখবো।’
এনবিআর সদস্য জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘কর বৃদ্ধি করার জন্য দেশে নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটানো যায় কি’না তা ভাবতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে নতুন ক্ষেত্র আছে কি’না তা বিবেচনা করতে হবে।’