শিক্ষার্থীদের পরিবর্তনের কারিগর হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সুপ্রভাত ডেস্ক »

নতুনত্ব ও ভবিষ্যৎকে আলিঙ্গন করার মানসিকতা নিয়ে পরিবর্তনের কারিগর হতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাসস জানায়, মঙ্গলবার কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত ‘বাংলাদেশ: একটি উন্নয়ন মডেল : শেখ হাসিনার কাছ থেকে শেখা’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করুন এবং পরিবর্তনের কারিগর হোন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করুন, আপন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মনোনিবেশ করুন এবং দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করুন।’

কাতার ইকোনমিক ফোরাম-২০২৩-এ যোগ দিতে দেশটির রাজধানী দোহায় তিনদিনের সরকারি সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস তুলে ধরেন।

২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে গঠনের বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই। স্মার্ট বাংলাদেশে একটি স্মার্ট সরকার, একটি স্মার্ট অর্থনীতি, একটি স্মার্ট জনসংখ্যা, একটি স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট জনশক্তি থাকবে।’

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখতে জনগণকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করছি। সারা দেশে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার একটি ন্যানো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস করেছে। ডিজিটাল ডিভাইস বা প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সমাজে নারীদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। খবর বিডিনিউজের।

বাংলাদেশের উন্নয়ন কোনো অলৌকিক ঘটনা নয় মন্তব্য করে তিন বলেন, ‘এটা আমাদের নারী-পুরুষের সম্মিলিত কাজ। আমি শুধুমাত্র তাদের কাক্সিক্ষত পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছি।’

তবে এই পথচলা এতটা সহজ ছিল না দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বাবাকে তাঁর জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। আমরা সন্তানরা তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। স্বাধীনতা লাভের পর সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই দেশের প্রতিষ্ঠাতা, আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমার মা, তিন ভাই, দুই ভগ্নিপতি এবং এক চাচাসহ আমাদের পরিবারের ১৮ জন সদস্যের সাথে হত্যা করা হয়েছে।

‘সেদিন আমি এবং আমার বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছি। আমার বোন এবং আমাকে ছয় বছর ধরে উদ্বাস্তু জীবনযাপন করতে হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, তার দল আওয়ামী লীগ তাকে সভাপতি নির্বাচিত করার পর ১৯৮১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরে খাদ্য ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছেন জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমার জীবননাশের জন্য কমপক্ষে ১৯ বার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। সবচেয়ে গুরুতর একটি ছিল ২০০৪ সালের অগাস্টে যখন আমাকে হত্যা করার জন্য আমার উপর এক ডজন আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আমি বেঁচে গিয়েছি, কিন্তু আমার দলের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত এবং কয়েক শতাধিক আহত হয়েছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি শুধু তাঁর দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তাঁর সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দল, আওয়ামী লীগ, ২১ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয় এবং আমি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলাম। পাঁচ বছরে, আমরা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।

‘আমরা ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম এবং তারপরে হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং সামরিক হস্তক্ষেপের আরেকটি অন্ধকার সময় অতিক্রম করতে হয়েছিল।’ পরবর্তীতে ২০০৮ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠনের কথাও বলেছেন শেখ হাসিনা।