শান্তিচুক্তির সুফল মিলছে পার্বত্য অঞ্চলে : উপাচার্য

চবি প্রতিনিধি »

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, পৃথিবীর অনেক জায়গায় নানা প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন শান্তিচুক্তি হয়েছিলো, তবে সবগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু আমাদের শান্তিচুক্তি অনন্য। এ চুক্তির পরে গত ২৬ বছরে অনেকগুলো সুফল দেখেছি। এখন আমরা পার্বত্য অঞ্চলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছি। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন হলো- সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবে। আমরা যদি পার্বত্য অঞ্চলকে আরও উন্মুক্ত করে দিতে পারি, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আরও সমৃদ্ধ হবে। এখানে অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি) আয়োজিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৬ বছরপূর্তি : শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের নিরিখে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চবি উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক, চবি জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ, চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ।

চবি উপাচার্য আরও বলেন, একটা সময় আমরা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামে মৃত্যুর খবর শুনতাম। আমরা খুব খারাপ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একটা সময় পার হয়েছি। একটা সময় সেনাবাহিনী বাড়ি থেকে পার্বত্য অঞ্চলের উদ্দেশে বের হতো বিদায় নিয়ে। তারা জানতো না আবার বাড়িতে ফিরতে পারবে কি-না। কিন্তু আজকে আমরা এ অঞ্চলগুলোতে নির্বিঘেœ ঘুরতে যাই। এখন সেই অসময় কেটে গেছে। অসলো চুক্তি বা প্যারিস শান্তিচুক্তি ঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলেও আমাদের এই চুক্তি বিশ্বে মডেল হিসেবে তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার উপজাতীদের জন্য কোটা সিস্টেম চালু করেছে। আমরা দুটি আবাসিক হলে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন নির্বাচনী সুবাতাস বইছে। সবাই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে একত্রিত হয়েছেন। এই সাংসদরাই যেন আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পারে সে বিষয়ে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা মনে করি পার্বত্য অঞ্চলের সমৃদ্ধির জন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর আবারও আসা দরকার।

চবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ বলেন, দীর্ঘ অশান্তি ও সংঘাতের পরে এই অঞ্চলে শান্তি এসেছে ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। এই চুক্তির করায় আমরা ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নোবেল পুরস্কার পাবেন। তবে তিনি ইউনেস্কোর শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। সেখানে বর্তমানে সংঘাত চললেও আগের থেকে অনেক কমে এসেছে।

চবি জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. বশির আহাম্মদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-রাজনীতি, বৈচিত্র্যতা,ভাষা ইত্যাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ আমলের শাসকরা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অথনৈতিক বিভিন্ন ভাবনা ভেবেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় দু’দশকের বেশি অশান্তি বিরাজ করেছে। এই অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠন জনসংহতি সমিতির সাথে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি হওয়ায় প্রায় ৯০ শতাংশ সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। কিন্তু দেশি বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। চাঁদাবাজি এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছে তারাই। শান্তিচুক্তির ৭২টি ধারার বেশিরভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করতে পারবে।

আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, দীর্ঘ দুই দশকের সংঘাত নিরসন হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। এটি সাংবিধানিক একটি কাঠামোর মাধ্যমেই হওয়া শান্তিচুক্তি। আন্তর্জাতিক মানদ- মেনে এবং কোনো তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণ ছাড়াই এ শান্তি করতে সক্ষম হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই চুক্তির ৭২টি অনুচ্ছেদে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে একটি বিশেষ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে। তাদের অধিকার ফিরে পাওয়া, মিলিটারি ক্যাম্প প্রত্যাহার, বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টিসহ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো এ চুক্তিতে। এ ধরনের একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ শান্তিচুক্তি হওয়ার পরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষাখাত, আইন সংশোধনসহ অনেক কাজ করা হয়েছে। ২০১০ সালে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক যে কালচার, সেটা সংরক্ষণের জন্য আইন করা হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানেও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। তাই সংবিধান অনুযায়ী কারও প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। কোনো সমস্যা থাকলে সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। শান্তিচুক্তির কিছু বিষয় এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। আশা করি সেগুলোও নিষ্পত্তি হবে।