লকডাউন এখনি নয়

সুপ্রভাত ডেস্ক »

করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করায় স্বাস্থ্যবিধি মানায়ও ফের কড়াকড়ি আরোপের দিকে যাচ্ছে সরকার।

এখনই লকডাউন দেওয়া না হলেও খাবারের দোকানে বসে খেতে হলে টিকা সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে এক বৈঠক হয়।

সেই বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “লকডাউনের বিষয়ে আমরা সুপারিশ করিনি। লকডাউনের পরিস্থিতি এখনও হয়নি।

“লকডাউনের ওই পর্যায়ে যাতে যেতে না হয়, সেজন্যই আজকের এ প্রস্তুতি সভা। যা যা স্টেপ নেওয়ার তা নিই, তারপর দেখা যাক। এখনই লকডাউনের বিষয়ে ভাবছি না। এখন আমরা জোর দেব প্রতিরোধের বিষয়ে।”

এক্ষেত্রে মাস্ক পরা এবং রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার উপর কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেন তিনি।

জাহিদ মালেক বলেন, “মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

“টিকা যদি না নিয়ে থাকে, তাহলে রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে না। সেখানে খেতে হলে টিকা সনদ দেখাতে হবে। তবেই রেস্টুরেন্ট তাকে এন্টারটেইন করবে।”

টিকা সনদ ছাড়া কাউকে খাবার পরিবেশন করলে সেই রেস্তোরাঁকে জরিমানা করা হবে বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে রোববার পর্যন্ত ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ কোভিড টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৫ কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি জন। বুস্টার ডোজ নিয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৪০ জন।

স্কুল খোলা রাখা হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার উপর জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “লক্ষ্য করা গেছে, শিক্ষার্থীরা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহী নয়।”

কোন কোন ক্ষেত্রে কেমন কড়াকড়ি আসছে, তা ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ থেকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আলোচনায় আরও যা ছিল

স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো

বিদেশ থেকে আসাদের পুলিশ পাহারায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা

সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত করা

গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কমিয়ে আনা

মসজিদসহ সব স্থানেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা

দেশে ফের সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা সাড়ে ছয়শ ছাড়িয়ে যাওয়া এবং নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আবার ৩ শতাংশ পেরিয়ে যাওয়ার দিন এই বৈঠক বসে। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়ানো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ১০ রোগীও শনাক্ত হয়েছিল।

মূলত তা নিয়েই এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল, যাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ওমিক্রন নিয়ে করণীয় নিয়ে বৈঠক হলেও আলোচনায় আসে করোনাভাইরাস নতুন করে বৃদ্ধির বিষয়টি।

“আমরা করোনাভাইরাস মোকাবেলা করছি। তাই অনেক কিছুই জানতে পারছি। কীভাবে কী করতে হবে। ওমিক্রনের বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোও পরে জানানো হবে।”

এখন অবধি ওমিক্রনের যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তাদের সবাই হয় বিদেশ ফেরত কিংবা বিদেশ ফেরতদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টাইন নয়, পুলিশ পাহারায় কঠোর কোয়ারেন্টাইনের উপর জোর দেওয়ার ক্ষেত্রেও আলোচনা হয়েছে।”

নিজেদের প্রস্তুতির প্রসঙ্গ টেনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে, অক্সিজেন মজুদ আছে, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১২০টি আছে, ২০ হাজার বেড রয়েছে, চিকিৎসা অভিজ্ঞ, প্রশিক্ষিত। দেশবাসীও বিষয়গুলো জানে।

“আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, করোনা বেড়ে যাচ্ছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মৃত্যুহার বেড়ে যাবে। আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। করোনার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে আবারও লকডাউনের কথা চলে আসবে, সব কিছুর উপরই একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। যেটা আমরা চাই না,” বলেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে মাঠ পর্যায় থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, সিভিল সার্জনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

সূত্র : বিডিনিউজ