ভাষার জন্য যুদ্ধ

হৃদয় হাসান :

 

রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাইÑ বাংলা চাইÑ বাংলা চাই।

আমার তোমার ঠিকানাÑ পদ্মা মেঘনা যমুনা।

বাংলা আমার মায়ের ভাষাÑ এই ভাষাতেই বলতে চাই।

বাংলা আমার মায়ের ভাষাÑ এই ভাষাতেই মরতে চাই।

 

সেøাগানে সেøাগানে উত্তাল রাজপথ। একমাত্র উর্দুই হবে রাষ্ট ভাষাÑ পাকিস্তানি জান্তাদের এমন ঘোষণায় পূর্ব পাকিস্তানের অলিতে গলিতে, রাজপথে নেমে এসেছে বাংলার শাদূল দামাল ছেলেরা। এই ঘোষণার প্রতিবাদে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রধর্মঘট ডেকেছে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। আগামীকাল থেকে সকল স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। কোথাও কোনো ক্লাস হবে না। পাকিস্তানের সংখ্যাঘরিষ্ঠ জনগণের প্রাণের ভাষাÑ মায়ের ভাষা বাংলার অবমাননা সইতে পারছে না বীর বাঙালির দামাল ছেলেরা। ঢাকার রাজপথ উত্তেজনার তুঙ্গে। ঢাকার এই উত্তেজনা দেশের আনাচে কানাচেও ছড়িয়ে পড়েছে। মায়ের ভাষার অবমাননা কেউ সহ্য করতে পারছে না। মায়ের ভাষার মান রাখতে প্রয়োজনে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু উৎসর্গ করতে এক পায়ে খাড়া হয়ে আছে ছাত্রসমাজ। তাই তো সবাই আজ রাজপথে নেমে এসেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা না দিয়ে পাকিস্তানি জান্তাদের এমন অনৈতিক ও বিদ্বেষপূর্ণ নির্দেশনায় ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দুভাষী নেতৃত্ব রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণে মুসলিম লীগ সরকার পশ্চিমি তোষণনীতিই অবলম্বন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে। দীর্ঘ বঞ্চনার কারণে জমে ওঠা ক্ষোভ আগ্নেয়গিরির মতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এ কথা বলার পর রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাইÑ এই সেøাগানকে বুকে ধারণ করে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটে।

ঢাকা মেডিকেলের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র রাশেদ তার সহপাঠী ও বন্ধুমহলকে নিয়ে রাতভর পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড লেখায় ব্যস্ত সময় পার করছে। পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তাদের সহচর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য হোস্টেলের বাইরে এক মেসে বসে সারারাত এই পোস্টার লেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ছোটকাল থেকেই রাশেদ একটু ডানপিটে স্বভাবের। এলাকার খেলাধুলা ও বার্ষিক আয়োজনে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিতো। ছোটবেলা থেকেই তার হাতের লেখায় একটা আর্ট ছিলো বলে বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি, দেয়ালিকা ও পোস্টার সে নিজেই লিখতো। তাই আগের থেকেই স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ে পোস্টার লেখক হিসেবে রাশেদের বেশ সুনাম। মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রসমাজের এই আন্দোলনকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে পোস্টারÑ ফেস্টুনÑ প্ল্যাকার্ড লেখায় ঝাঁপিয়ে পড়ে রাশেদ। পোস্টারের কাজ শেষ করতে করতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। সহপাঠী ও বন্ধুরা মিলে সকাল হওয়ার আগেই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস, টিএসসি চত্বর, শাহবাগ, ঢাকা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকার দেওয়ালে দেওয়ালে ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষাÑ এই ভাষাতেই মরতে চাই।’ সেøাগান সম্বলিত পোস্টার সেঁটে দেয়।

পোস্টার সাঁটানো শেষে রাশেদ একটা রিকশা নিয়ে বাসার দিকে যায়। ঘরের দরোজায় আলতো টোকা দিতেই দরোজা খুলে যায়। ঘরে এক পা দিতে মাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাশেদ। মায়ের মুখটা কেমন জানি মলিন মলিন লাগে রাশেদের কাছে। রাশেদ বুঝতে পারে তার জন্য দুশ্চিন্তা ও নির্ঘুম রজনী কেটেছে নিশ্চিত। মায়ের এই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে নিজেকে অপরাধী অপরাধী মনে হয়। কিন্তু এই অপরাধের মধ্যেও নিজের প্রতি একটা গর্ববোধ কাজ করে। কারণ মায়ের মুখের ভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারার মধ্যেও মায়ের প্রতি, দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি একটা ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ কাজ করছে। মা বুঝতে পারেন ছেলে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল রাখতে পারছে না। মা বুঝতে পারেন তার মতো সারারাত নির্ঘুম কেটেছে ছেলেরও। প্রার্থক্য শুধু এইÑ ছেলে ভাষার জন্য লড়াই করতে গিয়ে নির্ঘুম কাটিয়েছে আর মা ছেলের জন্য দুশ্চিন্তা করে ঘুমহীন থেকেছেন। গোসল করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে আসতে বলে মা নাস্তা তৈরি করতে রান্নাঘরে প্রবেশ করেন। তখনও বাবা ও একমাত্র ছোটবোনের ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়নি। প্রাচুর্যের মধ্যে থেকে তাদের সকাল হয় আটটার পর। কিন্তু মা ও রাশেদ এর ব্যতিক্রম। তাঁদের সকাল হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। বাবা-মেয়ে এক ডালে তো মা-ছেলে অন্যডালে। একই পরিবারের মধ্যে দুই ধরনের চালচলন। বাবা-মেয়ের চালচলনে আভিজাত্য ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। আর মা-ছেলের দৈনন্দিন জীবন একেবারে সাদামাটাভাবে কেটে যায়। রাশেদের বাবা বড় ব্যবসায়ী। একেবারে নিম্মবিত্ত থেকে খুব স্ট্রাগল করে আজকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। নিজের মতোই ছেলেকে তৈরি করতে চান কিন্তু ছেলে আছে পড়ালেখা আর মানুষ ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে সময় ব্যয় করার চেষ্টায়।

ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে আসে রাশেদ। তার আগেই মা তার জন্য নাস্তা সাজিয়ে বসে আছেন। ছেলে খাচ্ছে আর মা নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন ঘুমে ঢুলুঢুলু ছেলের চোখের দিকে। খাওয়া শেষে একটু ঘুমিয়ে নিতে বললে রাশেদ বলেÑ অনেক কাজ পড়ে আছে মা। এখন বিশ্রাম নেওয়ার সময় নেই। মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে তবেই আমার ও আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার সময় হবে। দোয়া করো মা- যেন তোমার মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে পারি আমরা। বাবাকেও আমার জন্য দোয়া করতে বলিও। আর ইসরাতের দিকে খেয়াল রেখো। এই বলে মায়ের পা ধরে সালাম করে বেরিয়ে যায়।

নতুন দিনের সূর্য উদিত হয়েছে। ফাল্গুনের আজ ৮ তারিখ। শীতঋতু যেন বিদায় নিয়ে বাতাসে বসন্তের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। আকাশটায় আজ কিছুটা কুয়াশার চাদর বিছানো। রাশেদদের বাসা পেরিয়ে সামান্য এলেই বড় এক কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুলের বাহার দেখে রাশেদের মনটা উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। এই সময়টাতে প্রিয় কাউকে নিয়ে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মায়ের মুখের ভাষা বাংলার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় এই ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব না দিয়ে ব্যক্তিগত কোনো আনন্দে নিজেকে ভাসিয়ে নিতে পারবে না রাশেদ। কৃষ্ণচূড়ার বাহারি সৌন্দর্য থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতেই আরেক দিকে চোখ চলে যায়। পাশের বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাশেদের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে ফারিয়া। চোখাচোখি হতেই শরীরের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় পুলকিত হয়ে উঠে রাশেদের। কিন্তু এখন মনের এই চাওয়াকে প্রাধান্য বিস্তার করতে দেওয়া যাবে না। তাই মনের আবেগকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে রাশেদ। দূর থেকেই একটু হাসি দিয়ে হাতের ইশারায় কেমন আছে তা জানতে চায়। ফারিয়াও ইশারায় ভালো আছে জানিয়ে কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে রাশেদ আজকের ছাত্র ধর্মঘটের পক্ষে কিছু কাজ আছে বলে। রাশেদকে সাবধানে থাকার কথা বলে শুভকামনা জানায় ফারিয়া।

রাশেদের ছোটবোন ইসরাত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী। ইসরাত আর ফারিয়া সহপাঠী। তাদের দুজনের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব। একই পাড়ায় বসবাস। স্কুল শিক্ষক জিল্লুর রহমানের তিন সন্তানের মধ্যে ফারিয়া সবার বড়। খুব সাধারণ চলাফেরা। বাবাই ফারিয়ার আইডল। বাবার পরে যদি কারও প্রতি সমীহ জাগে সে হলো রাশেদ। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আর সাধারণ চলাফেরার কারণে রাশেদের প্রতি ফারিয়াকে প্রচ-ভাবে আকর্ষণ করে। ইসরাত আর ফারিয়ার মধ্যে আচার ব্যবহারে অনেক প্রার্থক্য থাকলেও বন্ধুত্বের মধ্যে তাদের কোনোদিন ফাটল ধরেনি। একই এলাকায় বসবাস এবং বাসায় আসা-যাওয়ার মধ্যে ছোটবোনের বান্ধবীকে রাশেদের খুব পছন্দ। রাশেদ ও ফারিয়ার মন-মানসিকতা এবং বোঝাপড়াটাও চমৎকার। একে অপরের প্রতি প্রচ- রকমভাবে ভালোলাগা কাজ করলেও আজ পর্যন্ত কেউ কাউকে বলেনি ভালোবাসার সিরিয়াস শব্দটি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে খুব দ্রুত ফিরে আসে রাশেদ। সহপাঠী ও বন্ধুরা সমবেত হতে থাকে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ঢাকা কলেজসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সমবেত হচ্ছে। গতরাত থেকেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। একসঙ্গে দুজনের বেশি লোক সমাগম করা নিষিদ্ধ। মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও বাংলার দামাল ছেলেরা এই নিষেধাজ্ঞা ভাঙতে অনড়। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ছাত্রীও এসে উপস্থিত। তারাও ছেলেদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মায়ের ভাষার সম্মানরক্ষার যুদ্ধে শামিল হতে চায়। মেডিকেল ক্যাম্পাস থেকে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিল শুরু। ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাইÑ বাংলা চাইÑ বাংলা চাই।’ ‘আমার তোমার ঠিকানাÑ পদ্মা মেঘনা যমুনা।’ ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষাÑ এই ভাষাতেই বলতে চাই।’ ‘বাংলা আমার মায়ের ভাষাÑ এই ভাষাতেই মরতে চাই।’ বুকের রক্ত দিয়ে মোরাÑ রাখবো ভাষার সম্মান’ এমনতর সেøাগান সেøাগানে উত্তাল ক্যাম্পাস। ছাত্রদের এগুতে দেয় না পুলিশ। ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে যাবেই। দুপক্ষের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশ মারমুখী হয়ে আছে। যে কোনো মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়বে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর। ছাত্ররাও অনড়। মিছিলের সম্মূখভাবে রাশেদ। এগিয়ে যাচ্ছেÑ রাষ্টভাষা বাংলা চাই প্ল্যাকার্ড হাতে। পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙবেই। বাংলা চাই বাংলা চাইÑ সেøাগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত। হঠাৎ পুলিশের গুলি। ঝাঁকেঝাঁকে গুলি ছুটে যাচ্ছে প্রতিবাদে উত্তাল নিরাপরাধ শিক্ষার্থীদের দিকে। সম্মুখসারির প্রতিবাদকারীরা একে একে লুটিয়ে পড়ছে রাজপথে। তাজা রক্তে রাজপথ লালে লাল হয়ে যাচ্ছে। তবুও থেমে নেই সেøাগান। রাষ্টভাষা বাংলা চাইÑ বাংলা চাই, বাংলা চাই। রাশেদের রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে পিচঢালা রাজপথ। কী মনে করে আজ ফারিয়ার দেয়া জামাটি পরেই বের হয়েছে। গত জন্মদিনে ধবধবে সাদারঙের জামাটি উপহার দিয়েছিল ফারিয়া। রক্তে সারা শরীর-জামা মাখামাখি। রাশেদের চোখে ভেসে ওঠে মায়ের মুখ। মা অদূরে দাঁড়িয়ে আছেন দেখে রাশেদ দুহাত প্রসারিত করে মাকে ডাকতে থাকে। মাÑ মাগো, তোমার মুখের ভাষার সম্মানরক্ষা করার জন্য আজ আমি রক্ত দিয়েছি মা। মা, তোমার ছেলের ঘুমের সময় হয়েছে। তোমার আদরের ছেলের মাথাটি এবার কোলে নিয়ে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দাও মা। মাÑ মাগো।

রাশেদ ক্ষীণস্বরে বিড়বিড় করতে থাকে কিন্তু কেউ তার কাছে আসে না। জবাব দেওয়ার মতো কেউ যে নেই তার সামনে। গুলিবিদ্ধ শরীরে প্রচুর রক্তপাতের কারণে রাশেদ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসে। পুলিশের গুলি, কাঁদুনে গ্যাস ও তীব্র লাঠিচার্জের কারণে গুলিবিদ্ধদের কাছে কেউ ঘেঁষতে পারছে না। হতাহতরা রাজপথে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। রাশেদ অবচেতন মনে দেখতে পায়Ñ মা তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মায়ের দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে ফারিয়া ও ইসরাত। তারাও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাশেদের দিকে। কারও মুখে কোনো কথা নেই। অদূরে দেখা যাচ্ছে একটা শহিদ মিনার। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে শহিদ মিনারটি। কানে ভেসে আসছে ভালোবাসায় সিক্ত প্রভাতফেরির অগ্নিস্ফুলিঙ্গÑ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারিÑ ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি …