‘বৈশ্বিক কার্বন বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম’

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই চট্টগ্রাম বিভাগে হওয়ার কারণে সেখানে বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন বিপর্যয়ের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানানো হয়েছে এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে।

কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক মাতারবাড়ি-১ এবং মাতারবাড়ি-২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে স্থানীয় জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে বলে দাবি করা হয়েছে পরিবেশকেন্দ্রীক দেশি-বিদেশি ৩টি সংগঠনের গবেষণায়।

গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে- এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে তার দূষণে প্রায় ৬ হাজার ৭শ মানুষের অকাল মৃত্যু হবে। হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবে স্থানীয় জনগণ। এসব থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশেকে বায়ু ও সৌর বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের দিকে যেতে হবে বলেও তারা মনে করেন।

চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত ২০ গিগাওয়াট নতুন কয়লা ও গ্যাস বিদ্যুৎ ক্ষমতার বিরূপ প্রভাবের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কর্মক্ষম জীবনকালে বায়ুমণ্ডলে ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন পরিমাণে কার্বন-ডাই অক্সাইড যোগ হবে।

‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে জ্বালানি উৎপাদন পরিকল্পনা : সম্ভাব্য কার্বন বিপর্যয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (বাপা), মার্কেট ফোর্সেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।

সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়া থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মার্কেট ফোর্সেসের নির্বাহী পরিচালক জুলিয়ান ভিনসেন্ট। তিনি তার গবেষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রেগুলোতে অর্থায়ন করছে জাপানি কোম্পানি। অথচ ২০২১ সালে জাপান জি-সেভেন সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন না করার অঙ্গীকার করেছিল। অর্থাৎ মাতারবাড়ি-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে অর্থায়ন করে দেশটি নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। এই প্রকল্পের কারণে স্থানীয়রা জীবিকা হারিয়েছে।

জুলিয়ান ভিনসেন্ট বলেন, জলবায়ুর ওপর চট্টগ্রামের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোর প্রভাব হবে ভয়ঙ্কর। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সমপরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরিত হবে। প্রকল্পগুলোর ধ্বাংসাত্মক প্রভাব এতোটাই ব্যাপক হবে যে, তা বাংলাদেশের ৫ বছরের বেশি জাতীয় নির্গমনের সমান।

গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২০৩০ সালে নাগাদ এলএনজি আমদানি করতে বাংলাদেশের বার্ষিক খরচ প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। এলএনজি থেকে প্রতি গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণে খরচ হবে গড়ে ৯৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে, দেশের অর্থনীতি বেশি দামে আমদানি করা জ্বালানি নির্ভর হয়ে পড়বে। আপাতত বিদেশি কোম্পানিগুলো এসব খরচ করলেও পরিশেষে দেশের সাধারণ জনগণকে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

জাপান,চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি কোম্পানি মিৎসুবিশি কর্পোরেশন, জেরা ও জেনারেল ইলেক্ট্রিকের মতো কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থে দূষিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের ফাঁদে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে জিম্মি করে রেখেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এলএনজি এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎপ্রকল্পগুলোর কারণে বাংলাদেশে আর্থিক ঝুঁকি নেমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, গত অর্থবছরে এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎখাতে ভর্তুকির জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু ২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বিদ্যুৎখাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

২০২১ সালে জাপান জি-সেভেন সম্মেলনে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন না করার অঙ্গীকার করেছিল, এখনও কেন তারা অর্থায়ন করছে জানতে চাইলে  জাপানভিত্তিক সংগঠন জকেসাসর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ইউকি তানেবের সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, আসলে বিদ্যুৎখাতের জাপানের টেকনোলজি এলএনজি ও কয়লাভিত্তিক নির্ভর। এই কারণে তারা এই দুই ধরনের বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ। সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।

সূত্র : ডেইলি স্টার ও ঢাকা পোস্ট