বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ

খুচরা বাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির সংকট বেড়েছে মাছ-মাংসের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বাজারে ঊর্ধ্বমুখী বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম। একের পর এক পণ্য যুক্ত হচ্ছে বাড়তি দামের তালিকায়। এমন অবস্থায় বিপাকে স্বল্প আয়ের মানুষ। এদিকে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝেমধ্যে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করলেও কোনো ধরনের সুখবর মিলছে না ক্রেতাদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে দেখা যায় সকল নিত্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকে। চিনি ও ভোজ্যতেল সয়াবিনের বাজার চড়া হওয়ার কারণে খুচরা বাজারে প্রায় দোকানে কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক খুচরা দোকানে মিলছে না চিনি।
এদিকে গত কয়েক মাস ধরেই অস্থির দেশের মুরগির বাজার। পোল্ট্রি খাদ্য-ওষুধের দাম বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে মুরগির দাম ওঠানামা করছে প্রতি সপ্তাহেই। তার মধ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেয়ার ডিমের দাম। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম বাড়তির মধ্যে স্থিতিতে থাকলেও বেড়েছে মাছ ও মাংসের দাম।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘দেশের প্রায় পণ্য আমদানির উপর নির্ভরশীল। ফলে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তার মধ্যে রয়েছে সরবরাহ ঘাটতি, আমদানি জটিলতার মত নানা সমস্যা।’
সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে, এই সপ্তাহেই বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল সয়াবিনের। সরকারের নির্ধারিত দরে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না রান্নার এ পণ্য। সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের উপরে এবং বোতলজাত সয়াবিনে ৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এতে খোলা সয়াবিনে ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে ওই দরে কোন সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে না। গতকাল খুচরা বাজারে সয়াবিন বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২১০ টাকা লিটারে।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ৫ থেকে ১০ টাকা কমলেও বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ দাম বেড়েছে এ আমিষজাত খাবারের।
টিসিবির হিসেবে, গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশের বেশি। গতকাল বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। যা গত বছর এদিনে বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। কক জাতের সোনালি মুরগিরও এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০০ টাকা বেডে বর্তমানে বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। এছাড়া দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৬১০ টাকা।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে গরু ও খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ থেকে ১২০০ টাকা।
তাছাড়া মুরগির পাশাপাশি ডিমের দামও বাড়তি। গতকাল বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। যা সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৭ শতাংশেরও বেশি। আর হাঁসের ডিম বিক্রি হয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯৫ টাকা ডজনে।
ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিমের দাম মার্কেটে চড়া। আগামিতে আর দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সকল ধরনের চালের দাম স্থিতিতে রয়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট মানভেদে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা ও মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা গত সপ্তাহেও একই দরে বিক্রি হয়েছিল।
অন্যদিকে সবজির দামও এখন বলতে গেলে স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। আলু ছাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকার নিচে তেমন কোন সবজি নেই। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচামরিচ। দুই সপ্তাহ ধরে উঠানামা করছে। গতকাল বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজিতে।
সবজির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সবজি ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, বাজারে কয়েক সপ্তাহ ধরে সবজির যোগানের স্বল্পতা রয়েছে। যার ফলে সবজির বাজার একটু চড়া।
বক্সিরহাটে আসা আবুল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘সকল ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেশ চড়া। ডিম, সবজিও এখন নাগালের বাইরে। প্রতিমাসে যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, আয় তো আর মাসে মাসে বাড়ছে না।’
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বাড়ছে সকল ধরনের মাছের দাম বেশ চড়া। ২০০ টাকার নিচে কোন ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সামুদ্রিক মাছের যোগান কমাতেই চাষের মাছের দিকে ঝুঁকছে ক্রেতারা। বাজারে চাষের পাবদা বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। মাঝারি আকারের পাঙ্গাস বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। নাইলোটিকা ২০০ থেকে ২২০ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা, কাতলা ২৬০ থেকে ৩৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে সমুদ্রের কোরাল বিক্রি হয়েছে ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা, রুপচাঁদা ৩২০ থেকে ৭০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রাজন দাস বলেন, ‘সমুদ্রের মাছের যোগান কমাতেই চাষের মাছের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের। তবে বাজারে মাছের দাম কমেনি। সমুদ্রের মাছের যোগান বাড়লে হয়তো কিছুটা দাম কমতে পারে।’