প্রস্তাবিত বাজেট : ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক »

জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমদানিকারকদের সমস্যা বিবেচনা করতে হবে। বর্তমানে আমদানিকারকদের অন্যতম সমস্যা এইচএস (হারমোনিজড সিস্টেম) কোড বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন বিশ্বব্যাপী ৬ ডিজিটের এইচএস কোড একই রকম। পরের ২ ডিজিট বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে হয়। দেশে প্রত্যেক অর্থবছরে বাজেটে অর্থায়নে কিছু কিছু এইচএস কোড নতুনভাবে তৈরি করা হয়, যা পরে ট্যারিফ বুকে সংযোজন করা হয়। এটি সম্পূর্ণ ম্যানুয়েল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে সঠিক এইচএস কোড নির্ণয় করা জটিল হয়ে পড়ে। এতে ভুলভ্রান্তি এবং তৎপরবর্তী জরিমানার প্রসঙ্গ চলে আসে। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে জরিমানা আরোপ সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা দরকার। এমন ভুল হলে শুল্কায়ন কর্মকর্তা সংশোধন করে শুল্কায়ন করতে পারেন। তাহলে কর ফাঁকির অভিযোগ থেকে আমদানিকারকরা রক্ষা পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের বাজেটে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে দেশীয় শিল্পকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে অনেক অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে আসছে। এর মধ্যে সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে সুনির্দিষ্ট শুল্ক বৃদ্ধি করায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের খরচ বাড়বে। তাই অবকাঠামোগত উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে এই শুল্ক আগের নির্ধারিত হারে আনার সুপারিশ করছি।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খলিলুর রহমান প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত উপকরণে অগ্রিম কর শূন্য হারে আনার দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘কারখানার আমদানিকৃত উপকরণের উপর অগ্রিম কর আদায় করা হয়।
এটি সমন্বয়ের জন্য মূল্য সংযোজন প্রয়োজন প্রায় ২০ শতাংশ। এটি উৎপাদনমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে ওই আমদানিকৃত পণ্য যদি অবিক্রিত থাকে বা অপচয় হয়, সেক্ষেত্রে পরিশোধিত অগ্রিমকর কোনোভাবে সমন্বয়যোগ্য হয় না। তাই বাজেটে এই আমদানিকৃত উপকরণের অগ্রিম কর শূন্য হারে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২ শতাংশ হারে পুনঃনির্ধারণের প্রস্তাব করছি।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস কমানোর জন্য বাজেটে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহসহ মূল্য হ্রাসের ব্যবস্থা করা দরকার। ভ্যাট-ট্যাক্স কমাতে হবে, ব্যাংক ইন্টারেস্ট সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রাখতে হবে। এছাড়া রপ্তানি আয়ে ইনসেন্টিভ অব্যাহত রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সারাবিশ্বেই জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেশে শিল্পের প্রসার এবং নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য সোলার পিভি সিস্টেম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জ্বালানি সংকট নিরসন, উৎপাদন ব্যয় কমানো এবং রপ্তানির ধারা চলমান রাখার জন্য সোলার পিভি সিস্টেমের সরঞ্জামাদি শুল্ক রেয়াতিহারে আমদানির সুযোগ প্রদান করা দরকার।’
এ ব্যবসায়ী নেতারা সর্বজনীন পেনশন চালু ও সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনীর উপকারভোগীদের ভাতা বাড়ানোসহ চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে ২২০০ শয্যায় উন্নীত করা এবং চট্টগ্রামে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।