বাজারে আগুন, টিসিবিতে স্বস্তি

গাড়ি আসতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ

রিমন সাখাওয়াত »

দুপুর ১২টা। তপ্ত রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির ট্রাক সেলের জন্য অপেক্ষা করছেন। গাড়ি আসতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন তারা। ভঙ্গুর লাইনে নিজের কাক্সিক্ষত স্থানে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারা। সময়ের যথাপোযুক্ত ব্যবহার করতে না পারলে ৩০ থেকে ৪০ জনের পেছনে গিয়ে আবারও লাইনে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু শত কষ্ট সহ্য করেও টিসিবির পণ্য নেওয়ার আকুতি যেন তাদের চোখে ভাসছে।

বাজারে দ্রব্যমূল্যের আকাশচুম্বী দাম থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে টিসিবির পণ্যের জন্য সেই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন নানা বয়সী মানুষ। এসময় আন্দরকিল্লা মোড়ে বেনু বালা রানি নামে এক পঞ্চাষোর্ধ্ব নারী বলেন, ‘ভোর ৬টা থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি। বেলা ১২টা বাজলেও টিসিবির গাড়ির কোন দেখা নেই। সোমবার তো গাড়ি আসেনি।’ কিন্তু বাজার না হয়ে টিসিবিতে কেন ভরসা করছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজারে গেলে তেলে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। ২ লিটার তেল ৩২০ টাকা। টিসিবির গাড়ি থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া পেঁয়াজ, চিনি ও মসুর ডালও বাজারের চেয়ে কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। এতে কিছুটা কষ্ট হলেও কম দামে কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছি।’

খুচরা নিত্য পণ্যের বাজার ও টিসিবির পণ্য মূল্য তদারকি করে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে টিসিবি তা দিচ্ছে প্রতি লিটার ১১০ টাকায়। একইভাবে খুচরা বাজারে চিনি প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, ট্রাক সেলে ৫৫ টাকা। ৬৫ টাকা দামে বিক্রিত মসুর ডাল খুচরা বাজারে বিক্রয় হচ্ছে ৯৫ থেকে ১শ’ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেয়াজ ৫০ টাকা। টিসিবিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি। টিসিবির প্রতিটি পণ্য ১ কেজি করে ও ২ লিটার তেল কিনতে খরচ হচ্ছে ৩৭০ টাকা। কিন্তু তা বাজার থেকে কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৫৪০ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা। মূলত ১৭০ টাকা সঞ্চয়ের জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য কিনতে পারায় ট্রাক সেলে ভরসা করছেন তারা।

নগরের আন্দরকিল্লা, জামালখান গোলপাহাড় মোড়সহ বিভিন্ন টিসিবির ট্রাক সেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোর থেকে অপেক্ষমাণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুপুর ১২টা বাজেও টিসিবির ট্রাক সেলের দেখা নেই। যদিও সকাল ১০টা থেকে স্পটে থাকার কথা। এসময় দেখা গেছে, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকে হাঁপিয়ে গেছেন। অনেকে ফুটপাতে পাশে বসে বিশ্রাম করছেন। পাশের এক নারী অন্য এক নারীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারা নিকট আত্মীয় নাকি? এমন প্রশ্নে সাহার বলেন, ‘আমি লাইনে আছি এটা জানান দিতে সামনে দাঁড়ানো আপার হাত ধরে রেখেছি।’

বেলা সোয়া ১২টায় ট্রাক সেল জামালখান এলাকায় পৌঁছালে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। পণ্য নেওয়ার উদ্যমে আবারও দাঁড়িয়ে গেছে লাইনে। ডিলারেরা বলছেন, ‘ক্রেতাদের চাহিদামত পণ্য দেওয়া হচ্ছে। কারণ বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি থাকায় ক্রেতারা সকল পণ্য নিজ প্রয়োজনেই ক্রয় করছেন। আগে কেউ চিনি নিতে চাইলে পেঁয়াজ নিতে চাইত না। আবার অনেকে শুধু তেলের জন্যই দাঁড়াতেন। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না।
জামালখান মোড়ে ট্রাক সেলের ডিলার তাপস চৌধুরী সুপ্রভাতকে বলেন, ‘রাস্তায় যানজট বেশি থাকায় আজ আসতে একটু বেশি সময় লেগেছে। তাছাড়া টিসিবির গোডাউন থেকে মাল ট্রাকে লোড করতেও সময় বেশি লেগে যায়। তবে মানুষ স্বস্তিতে পণ্য ক্রয় করতে পারছে। বাজারে সকল পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখি হওয়াতে টিসিবির ট্রাক সেলে চাপ বেড়েছে।’

এদিকে টিসিবির অফিস প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেশি হওয়াতে টিসিবির ট্রাক সেলে ভরসা করছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। তবে এভাবে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ানোর কি প্রয়োজন? টিসিবির ট্রাক সেল দেখলে প্রয়োজনীয় নিত্য পণ্য ক্রয় করবে মানুষ।’
গাড়ি স্পটে পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময়মত স্পটে পৌঁছাতে সকল ডিলারকে তাড়া দিয়ে থাকি। কিন্তু তারা আসতে দেরি করার কারণে স্পটে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। গাড়ি লোডে আমাদের যথেষ্ট শ্রমিক নিয়োগ রয়েছে। ডিলারেরা সময় মত টিসিবি অফিসে না আসায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।’