বাঁশখালী পৌরসভায় এনআইডি জালিয়াতি করে ৩৯ জনের বয়স্ক ভাতা

জেলা-উপজেলায় ২টি তদন্ত কমিটি গঠন

উজ্জ্বল বিশ্বাস, বাঁশখালী :

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও এনআইডি কার্ড জালিয়তি করে বাঁশখালী পৌরসভার ৩৯ জন অনুপযুক্তদের বয়স্ক ভাতা দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। ভুয়া কার্ডধারীদের সরকারি নিয়মে নারীর ড়্গেত্রে বয়স ৬২ কিংবা পুরম্নষদেরড়্গেত্রে বয়স ৬৫ হয়নি। ঘুষ নিয়ে এসব অপকর্ম করেছেন বাঁশখালী উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা, বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র ও সংশিস্নষ্ট কাউন্সিলররা। বিষয়টি জানাজানি হলে চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ও বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার পৃথক ৩ সদস্যের ২টি কমিটি গঠন করেন। ইতোমধ্যে উপজেলা কমিটি তদন্ত শুরম্ন করলেও জড়িত সংঘবদ্ধ সংশিস্নষ্টরা অপকর্ম ঢাকতে তদন্ত দলের কাছে নানা যুক্তি খাঁড়া করছেন।

জানা গেছে, বাঁশখালী পৌরসভায় বয়স্ক ভাতা ভোগী ১ হাজার জন। এবার নতুন ও প্রতিস্থাপন মিলিয়ে আরও মোট ১০৯ জনের তালিকা গত মার্চ মাসে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দেন বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র। এই ১০৯ জনের মধ্যে ৩৯ জনেরই ভুয়া এনআইডি কার্ড। যাদের বয়স বয়স্ক ভাতা পাবার উপযুক্ত হয়নি। সংশিস্নষ্ট নির্বাচন অফিস এসব ভুয়া এনআইডি কার্ড সার্ভারে তদন্ত করেও কোন হদিস পাননি। অভিযোগ আছে, জনপ্রতি ১০ হাজার, ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে অনুপযুক্ত ব্যক্তিদের এসব ভুয়া এনআইডি কার্ড দিয়ে সংশিস্নষ্টরা বয়স্ক ভাতার তালিকাভুক্ত করেছেন। তবে ঘুষ দাতারা নিজেদের বাঁচাতে এবং সংশিস্নষ্ট জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের বাঁচাতে তা অস্বীকার করছেন। জানা গেছে, জালিয়তির মধ্যে রয়েছে, বাঁশখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩জন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫জন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১১ জন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ জন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩জন। বয়স্ক ভাতা পাবার অনুপযুক্ত ভুয়া এনআইডি কার্ডধারী মালতী রম্নদ্র, বাসনা দাশ, খতিজা বেগম, গুল মেহের, মো. আশরাফ আলীসহ অনেকে বলেন আমাদের জনপ্রতিনিধিরা এনআইডি কার্ড ও ছবি দিতে বলেছেন তা আমরা জমা দিয়েছি। তারপর কী হয়েছে জানিনা।

উপজেলা তদন্ত কমিটির এক সদস্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফয়সাল আলম বলেন, ‘ভুয়া এনআইডি কার্ডধারী বয়স্ক ভাতার নথিভুক্ত ব্যক্তিদের এনআইডি কার্ড সার্ভারে যাচাই করেছি। একটির সঠিক সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন,‘ জেলা পর্যায়ের ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন,‘ উপজেলা পর্যায়ে গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি বিষয়টি তদন্ত করছে। তাছাড়া জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠিও প্রেরণ করা হয়েছে।’

বাঁশখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্যানেল মেয়র মো. দেলোয়ার বলেন, ‘ আমরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবা করতে গিয়ে বয়স্কভাতার তালিকা করেছি। কেউ ভুয়া এনআইডি দিলে আমাদের দোষ কী ? পৌরসভায় তো ভুয়া নাকি সঠিক এনআইডি কার্ড তদন্ত করার কোন মেশিন নেই। সমাজসেবা কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা এসব জালিয়তি করেছেন।’

বাঁশখালী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আনোয়ারা উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ সমাজসেবা অফিস থেকে পৌরসভায় বয়স নিয়ে কয়েকজনের বিরম্নদ্ধে আপত্তি জানানো হয়েছিল। তারপরও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যয়নপত্র দিয়ে বয়সের নিশ্চয়তা দেয়ায় আমি নথিভুক্ত করে জেলায় পাঠিয়েছি। এখানে আমাদের কোন অনিয়ম ও দুর্নীতি নেই।’