ফ্লাইওভারে জননিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব কার

smart

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গতকাল মহিউদ্দিন চৌধুরী ফ্লাইওভার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করল। কদমতলী, এম এ মান্নান ও আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের পর মূলত এটি চতুর্থ উড়ালপথ চট্টগ্রামে। লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটারের এই উড়ালপথের উদ্বোধন করা হলেও যান চলাচলের জন্য এটি এখনই খুলে দেওয়া হচ্ছে না। নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ সিডিএ-র বক্তব্য অনুযায়ী আরও অন্তত দু মাস লেগে যেতে পারে যান চলাচলের উপযোগী হতে। আমরা প্রত্যাশা করব কাজ শেষ করার আগে কর্তৃপক্ষ খুঁটিনাটি সকল বিষয় মাথায় রাখবে। উড়ালপথে প্রয়োজনীয় লুপ ও র‌্যাম্পের ব্যবস্থা করবে।
এসব বলার কারণ হলো, এর আগে নির্মিত তিনটি উড়ালপথে কোনো না কোনো সমস্যা রয়ে গেছে। সুপ্রভাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ও কদমতলী-দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারে রয়েছে বিভিন্ন জটিলতা। কদমতলী-দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারে নিরাপত্তাজনিত কারণে যান চলাচল সন্ধ্যার পর থেকে কমে যায়। এ ফ্লাইওভারের ওপরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়নি। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বরতরা সিসিটিভি ক্যামেরার চেয়ে বড় সমস্যা মনে করছেন ফ্লাইওভারে পর্যাপ্ত আলো না থাকা।
ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা নিয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের পাটোয়ারী সুপ্রভাতের প্রতিনিধিকে বলেন, ‘এই ফ্লাইওভারে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনা বন্ধ করতে নিয়মিত পুলিশি টহল রাখা হয়। কিন্তু ওখানে একটা লাইটও থাকে না। অন্ধকার যেখানে, সেখানে অপরাধের ঘটনাতো ঘটেই। কিন্তু ওখানের ছিনতাইকারীরা লাইটগুলো নষ্ট করে দেয় বলে সমস্যা বেশি হয়। গত একবছর ধরে ওখানে লাইট নেই।’ এক বছর ধরে একটি ফ্লাইওভারে লাইট না থাকার দায়টি কার? দেখভালের দায়িত্ব যেহেতু সিটি করপোরেশনের সেহেতু দায় তাদেরই নিতে হবে।
অন্যদিকে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের মূল প্রতিবন্ধকতা হলো একটি অপরিকল্পিত র‌্যাম্প, যেটি চান্দগাঁওয়ের দিক থেকে এসে ওপরে উঠেছে। যেহেতু এটি বিধিবহির্ভূত ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সেহেতু এটি অত্যন্ত সংকীর্ণ। শুধু তাই নয় এটার কারণে ফ্লাইওভারের ওপরেই ভুলভাবে ক্রসিং করা হয়েছে। ফলে এখানে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটি নিয়ে কোনো কিছু বলতে নারাজ দায়িত্বশীলরা।
সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারটি নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকতা আনলেও অপর্যাপ্ত র‌্যাম্পের কারণে পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
ফ্লাইওভারে ৬টি র‌্যাম্প নির্মিত হওয়ার কথা ছিলো। এরমধ্যে ফ্লাইওভারের জিইসি মোড়ে ৪টি র‌্যাম্প হওয়ার কথা। সেখানে ওয়াসা থেকে জিইসি মোড়ের দিকের গাড়িগুলো জিইসি কনভেনশনের সামনে, মুরাদপুরের দিকে যাওয়া গাড়িগুলো ইফকো কমপ্লেক্সের সামনে, মুরাদপুর থেকে জিইসি মোড়ের দিকের গাড়িগুলো মেরিডিয়ানের সামনে এবং ওয়াসার দিকে যাওয়া গাড়িগুলো ব্লুজম গার্ডেনের সামনে থেকে ওঠার কথা। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় নির্মিত হয়নি জিইসি মোড় এলাকার দুইটি র‌্যাম্প। এছাড়া ষোলশহর দুই নম্বর গেটে বায়েজিদ বোস্তামী রোডের দিকে দুটি লুপ আছে। একটি লুপ দিয়ে গাড়ি যেতে পারে এবং অপরটি দিয়ে গাড়ি আসতে পারে।
রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থে গড়ে তোলা এসব অবকাঠামো যেন জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার প্রথম থেকেই। সে সঙ্গে মনে রাখা দরকার, অবকাঠামো বানানোই শেষ নয় তার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করতে হবে। আর কোন প্রতিষ্ঠান কী দায়িত্ব পালন করবে তা-ও নিশ্চয়ই নির্ধারণ করা আছে। কাজেই অন্যের কাঁধে দোষ চাপানোর রীতি থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।