ফিলিস্তিন কীভাবে পরিচালিত হবে তা-ও ঠিক করবে ইসরায়েল

দুই মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ২২ হাজার ৩১৩ ফিলিস্তিনি। ২ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সি এ খবর জানায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আহত ৫৭ হাজার ২৯৬ ফিলিস্তিনি। হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। বাস্তুহীন হয়েছেন ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আল-কুদরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গেলো ২৪ ঘণ্টায় গাজার মধ্যাঞ্চলের বেশ কয়েকটি ভবনে বিমান হামলায় প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ১২৮ জন। এক দিনের ব্যবধানে আহত হয়েছেন ২৬১ জন।
এদিকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মীদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩ লক্ষ ২৬ হাজার ফিলিস্তিনি সংক্রামক রোগের কবলে পড়েছে। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে, গেল ২৪ ঘণ্টায় ১৫০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর আগে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে নিহতদের মধ্যে ৮ হাজার শিশু রয়েছে। ৬ হাজার ২শ’ নারী। এখনও ৭ হাজার ৬শ’ মানুষ গণনার বাহিরে রয়েছে।
এই যখন পরিস্থিতি তখন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ শেষ হলে ভবিষ্যতে কীভাবে গাজা শাসন করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি বলেন, ওই এলাকায় ফিলিস্তিনি শাসন থাকবে সীমিত। হামাস আর গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং ইসরায়েল সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। গ্যালান্টের বর্তমান ‘চতুর্মুখী’ পরিকল্পনার আওতায় গাজার সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে থাকবে। বহুজাতিক একটি বাহিনী ওই এলাকার পুনর্গঠনে কাজ করবে। কারণ ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পরিকল্পনার আওতায় প্রতিবেশী দেশ মিশরের একটি ভূমিকা থাকবে তবে তা কী হবে, সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। যদিও নথিতে বলা হয়েছে যে, পুরো এলাকা পরিচালনার দায়িত্ব ফিলিস্তিনিদেরও দেয়া হতে পারে।
গ্যালান্ট বলেন, গাজার বাসিন্দারা ফিলিস্তিনি, তাই ফিলিস্তিনি একটি কাঠামো নেতৃত্বের দায়িত্বে তারা থাকবে। কিন্তু এখানে শর্ত থাকবে যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি কোন শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড বা হুমকি আসবে না।’
তবে গাজার ভবিষ্যত (?)নিয়ে এই আলোচনা নিয়ে ইসরায়েলের মধ্যেই গভীর মতভেদ দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কিছু কট্টর ডানপন্থি সদস্য বলেছে, ফিলিস্তিনের নাগরিকদের গাজা ছেড়ে নির্বাসনে চলে যেতে বলা উচিত। আর ওই এলাকায় ইহুদী বসতি আবার গড়ে তোলা উচিত।
বিতর্কিত এই প্রস্তাবকে ‘চরমপন্থি’ এবং ‘অকার্যকর’ বলে উল্লেখ করে তা বাতিল করে দিয়েছে ওই এলাকার অন্য দেশগুলো যাদের মধ্যে ইসরায়েলের মিত্রদেশও রয়েছে। যদিও গ্যালান্টের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তার অন্য সহকর্মীদের আনা প্রস্তাবের তুলনায় বেশি বাস্তবসম্পন্ন বলে মনে করা হচ্ছে, তারপরও হয়তো এই প্রস্তাব বাতিল করে দেবেন ফিলিস্তিনি নেতারা। তারা বলছেন, ‘এই বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ওই এলাকা পরিচালনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গাজাবাসীর থাকা উচিত।’
ইসরায়েল বা বাইরের কোনো রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া ফর্মুলা গাজাবাসীরা মেনে নেবে তা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। গাজাবাসীরাই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তারা কীভাবে, কাদের দ্বারা শাসিত হবে তা তারাই নির্ধারণ করবে। এ বিষয়ে তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিতে হবে। তাতেই সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে। একদিন ফিলিস্তিনি জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে সেখানে ইসরায়েল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে যে সংকটের বীজ বপন করা হয়েছিল তা থেকে তো প্রতিনিয়ত বিষবাষ্পই ছড়াচ্ছে। এখন নতুন করে আরেকটি সংকটের পথ প্রশস্ত করা সমীচীন হবে না।