চট্টগ্রামে নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন : ভোটগ্রহণ কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

প্রচার-প্রচারণা শেষে এখন প্রতীক্ষা নির্বাচনী ভাগ্য নির্ধারণের। এবার শুরু হবে ভোটগ্রহণ। কাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে রয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন-এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কাল রোববার সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। ১৬টি সংসদীয় আসনে ২ হাজার ২৩ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও অপরাধ দমনে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে মাঠে নেমেছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। তারা ভোটগ্রহণের আগের দুদিন, ভোটের দিন এবং ভোটগ্রহণের পরের দুদিন নির্বাচনী অপরাধ দমনে কাজ করবেন। এ সময়ে দায়িত্ব পালনকালে কোনো নির্বাচনী অপরাধ বিচারার্থে আমলে নেওয়া হলে সেই প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব (আইন) বরাবরে পাঠাবেন বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রামে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে ৩২ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন।’
চট্টগ্রামে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলতে আমাদের কিছু নাই, আমাদের এখানে কিছু রিমোট প্লেস (দুর্গম এলাকা) রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টা এবং ভোটগ্রহণ সমাপ্তির পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত যে কোনও ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এ সময়ে নির্বাচনী এলাকায় কোনও ব্যক্তি জনসভা বা অনুষ্ঠান আহ্বান কিংবা তাতে যোগদান করতে এবং কোনও ব্যক্তি মিছিল বা শোভাযাত্রা সংগঠিত করতে বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না। উক্ত বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা ও উপজেলা মিলে প্রায় সাড়ে চার হাজার পুলিশ সদস্যকে আইনশৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী এলাকায় চলে গেছেন।
র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৬টি নির্বাচনী আসনের বিপরীতে ৫০টির বেশি স্ট্রাইকিং টিম (টহল দল) এবং পাঁচটিরও বেশি সাদা পোশাধারী গোয়েন্দা দল নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম রিজিয়নে (অঞ্চলে) ১৭৭ প্লাটুন বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্য মাঠে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। নির্বাচনের সকল প্রচার প্রচারণা শেষ হয়েছে ৫ জানুয়ারি সকাল আটটায়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামের ১৬ আসনে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন ১২৫ জন। এদের মধ্যে নৌকা, স্বতন্ত্র ও আরও বিভিন্ন দলের প্রার্থী রয়েছে।
১৬ আসনে মোট ভোটার ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯০ জন ও নারী ভোটার ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৭৫১ জন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৩টি। বুথের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৩২টি।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন, জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় এলাকায় শনিবার (৬ জানুয়ারি) মধ্যরাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ট্যাক্সি ক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস, ট্রাক ইত্যাদি চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা থেকে সোমবার (৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসন, অনুমতিপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। এছাড়া ৬ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলার নির্বাচনি এলাকায় সকল প্রকার নৌ-যান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।