প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ : দ্রুত সহায়তা পৌঁছানো প্রয়োজন

করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবেলায় দেশের নি¤œআয়ের মানুষদের জন্য ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্যাকেজের আওতায় দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নৌ-পরিবহন শ্রমিক নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবেন। উপকারভোগীর সংখ্যা ১৭ লাখের বেশি। বরাদ্দ ৪৫০ কোটি টাকা। এছাড়া ২৫ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনায় ১৫০ কোটি টাকা, তাৎক্ষণিক অনুরোধে ভুক্তভোগীদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে জেলা প্রশাসকের কাছে ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। পল্লী এলাকায় কর্মসৃজন প্রকল্পে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পিকেএসএফের মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে ১ হাজার ৫ শ কোটি টাকার বরাদ্দ, পর্যটনখাতে হোটেল মোটেল থিম পার্কের কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধে ব্যাংক মারফত ৪ শতাংশ সুদে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্বল্পআয়ের মানুষদের করোনার এই বিপর্যয়ের মধ্যে এই বরাদ্দ তাদের সহায়তা দেবে।
যথাযথ তালিকা প্রণয়ন করাও আবশ্যকীয় কাজ। অতীতে উপকারভোগী মানুষের তালিকা প্রণয়নে জনপ্রতিনিধি ও আমলারা সুবিবেচনার পরিচয় দেননি। কিছু ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, বরাদ্দ প্রদানে অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সরকারি প্রকৌশল সংস্থা বাদ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধীনে নেওয়া এ প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম পাওয়া গেছে। নির্মাণ ত্রুটির কারণে বেশকিছু ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল পর্যায়ে কিছু আমলা ও জনপ্রতিনিধির অসাধুতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর জনগণের উপকারার্থে গৃহিত কর্মপরিকল্পনা সমালোচনার মুখে পড়ছে।
বেসরকারি সংস্থার গবেষণায় এই কোভিডকালে আড়াই কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন অর্থমন্ত্রী এই পরিসংখ্যান মেনে নিতে না চাইলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা যে অতীতের তুলনায় বেড়েছে এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। শহরে-গ্রামে নি¤œআয়ের মানুষের ডাটাবেজ তৈরি করা গেলে সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব। বিবিএস এই কাজ হাতে নিলেও এখনও তা শেষ করতে পারেনি। সামনে কঠোর লকডাউন আসছে তার আগেই নি¤œআয়ের ও দিনখেটে খাওয়া মানুষের হাতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা যাতে পৌঁছে যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি চলছে, তবে অনেকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছেন, এ জন্য ডিলারদের পণ্য বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মানুষদের ত্রাণ ও সাহায্য দিতে এগিয়ে আসছেন, বেশকিছু সামাজিক সংগঠন করোনার এই সময় স্বেচ্ছাসেবী দিচ্ছেন, মৃতদের দাফন ও সৎকারেও কাজ করছে কিছু সংগঠন। প্রশাসনের উচিত তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওযা। সমাজের তৃণমূলে মানবিক জাগরণ ঘটাতে পারলে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ সান্ত¦না পাবে, স্বস্তি পাবে।
লকডাউন শিথিল করায় স্বাস্থ্যবিদগণ করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন কিন্তু ঈদ-উল-আজহার এই সময়ে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, জীবন-জীবিকা সচল ও সক্রিয় না করে উপায় নেই। তবে মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, পরিস্থিতি বুঝে সচেতন হয়, টিকা নেয়, লোক সমাগম এড়িয়ে চলে, সামাজিক দূরত্ব যদ্দূর সম্ভব মেনে চলে তাহলে করোনা সংক্রমণ কিছুটা হলেও কমতে পারে।