প্যাথলজি বিভাগে সুপারিশে মিলছে রিপোর্ট !

চমেক হাসপাতাল

নিলা চাকমা

চকরিয়া থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে সেবা নিতে এসছেন মোহাম্মদ কুদ্দুস। তিন বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে চার ঘণ্টা ধরে রিপোর্ট নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তার সিরিয়াল আসে না। কিন্ত লাইনে না দাঁড়িয়েও কিছু সংখ্যক লোক ভেতরে প্রবেশ করে দ্রুত রির্পোট সংগ্রহ করার অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, চার ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা রির্পোট পায় না। হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সুপারিশ নিয়ে তারা দ্রুত রিপোর্টগুলো নিয়ে যান। কিন্ত এই অনিয়ম দেখার কেউ নেই ’

গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় চমেক হাসপাতালে নতুন ভবনের চার তলায় প্যাথলজি বিভাগে কথা হয় ওই ভুক্তভোগীর। ওই বিভাগে টানা ২ ঘণ্টা থেকে দেখা যায়, দুই পাশে দুটি ফটক, একটিতে রির্পোট প্রদান করা হচ্ছে আরেকটিতে রক্ত পরীক্ষা আর মাঝখানে কাউন্টার। তৃতীয় থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত পুরুষ-মহিলা দুই লাইন করা হয়েছে। প্রথম গেইটে লাইনে না দাঁড়ানো রোগীদের প্রবেশ করানো হচ্ছে। এ সময় গেইটে দারোয়ানদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন রোগীরা। কাউন্টারে তেমন একটি ভিড়ও লক্ষ্য করা যায় নি।
রির্পোট নেওয়ার ফটকের চিত্র আরো ভয়াবহ। বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রির্পোট নেওয়ার নিয়ম থাকলেও অন্তত ৬-৭ জন রোগী স্লিপ হাতে ভেতর থেকে রির্পোট সংগ্রহ করছেন। তার মধ্যে মো. খাইয়ুম নামে নিরাপত্তা প্রহরীকেও স্লিপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া এক যুবককে ভেতরে ঢুকে ২-৩ বার রির্পোট নিতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার সুপারিশ আছে। মেডিসিন বিভাগ থেকে পাঠানো হয়েছে। কে পাঠিয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এদিকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রেসার বেড়ে একজন রোগী পড়েও গেছেন।

রির্পোট নিতে আশা আরেক রোগী সাইলা বেগম অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘সকাল সাতটায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি ,এখন দুপুর ১২টা। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও রিপোর্ট পায় না। অনেকে লাইন ছাড়া দাঁড়িয়ে, আবার কেউ ভেতরে প্রবেশ করে রিপোর্ট সংগ্রহ করছেন। এখানে অনেক রোগী রিপোর্ট নিতে আসেন। তারা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। আবার না দাঁড়ালে তাদের জন্য কেউ জায়গাও রেখে দেয় না। দায়িত্বে থাকা গার্ডরা এসব অনিয়ম না দেখার ভান করে। এই অনিয়মগুলো বন্ধ করলে সেবার মান আরও ভালো। রোগীদের ভোগান্তি কমানোর জন্য এই নিয়ম দ্রত বন্ধ করা উচিত।

জানা গেছে, গড়ে ৯০০ থেকে ১০০০ রোগীদের সেবা দেওয়া হয় এই বিভাগে। কেউ রক্ত পরীক্ষা, কেউ আসেন রির্পোট নিতে। রক্ত জমা দেওয়ার পর পরের দিন ৯ টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে মিলে রিপোর্ট। ডোপ টেস্ট রিপোর্ট দেওয়া হয় বিকেল পাঁচটা থেকে ৬ টা পর্যন্ত। এই বিভাগে প্রায় ৩১ টি পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে টিসি. ডিসি . ইএসআর হিমোগ্লোবিন (একত্রে) ১৫০ টাকা, টিসি. ডিসি . ইএসআর হিমোগ্লোবিন (আলাদা) ৩০ টাকা, এস. জি. পি. টি ৭০ টাকা, এস. জি. ও . টি ৭০ টাকা, মল পরীক্ষা ৩০টাকা, ব্লাড সুগার ৬০ টাকা, আইসিটি / এন এস আই ডেঙ্গু ৩০০ টাকা, আর এ টেস্ট ৬০, কার্ডিয়াক ট্রপোনিন ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার সেবা মেলে এই বিভাগে। বর্তমানে বিভাগটিতে চিকিৎসক রয়েছেন সাত জন এবং একটি পদ খালি রয়েছে। মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট ৬ জন, আউট সোর্সিংয়ের মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট ১৬ জন , চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা রয়েছেন ৪ জন।

আগে এক বুথেই স্যাম্পল কালেকশন করা হলেও এখন সাতটি বুথে কালেকশন করা হয়। আগে যেখানে ৩০০ থেকে ৪০০ রোগীদের সেবা দেওয়া যেত এখন তা হাজারে দাঁড়িয়েছে। আগে সকাল আটটা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত সেবা দেওয়া হলেও এখন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হয়।

রোগীদের অভিযোগ নিয়ে কথা হলে প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া রাজু বলেন, ‘পরিচালক স্যার বলেছেন ভেতর থেকে একটিও রিপোর্ট নেওয়া যাবে না। হাসপাতালের কোনো কর্মী রিপোর্ট নিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছি এই অনিয়ম রোধ করার। রোগীরা এমন অভিযোগ করবেই। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট পেতে চান। কিন্ত অন্য ওয়ার্ডে রোগীদের বেশি সেবা দেওয়া হয়। অল্প জনবল দিয়ে সেবা চালিয়ে নেয়াও বিরাট ব্যাপার। সবদিকে খেয়াল রাখা হয়ে উঠে না। ’

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘আমরা অনিয়ম বন্ধে কাজ করে যাচ্ছি। এখন একটু চাপ বাড়ছে। কারণ সব ফটক এক জায়গায়। আমরা পরিকল্পনা করেছি রিপোর্টের প্রধান বুথটি সামনে না রেখে পেছনে রাখবো। অর্থাৎ রক্ত জমা দেওয়ার কাউন্টার সামনে থাকবে। পেছনে থাকবে রির্পোট নেওয়ার বুথ। দুয়েক দিনের মধ্যেই আমরা সেই কাজটি করবো। আশা করি তখন শৃঙ্খলা ফিরবে।’