পিয়াসা-মৌ কেউই মডেল বা অভিনেত্রী নন

সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »

মডেলের পরিচয় দিলেও ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের বর্তমান পেশা মডেলিং নয় বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের পেশার বিষয়ে জানতে চাইলে, পিয়াসা মডেলিংয়ের কথা বললেও মৌ মডেল না বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বিভিন্ন পার্টিতে পারফর্মার (মডেল) বা এন্টারটেইনার হিসেবে অংশ নিতেন। এজন্য তিনি মোটা অংকের পারিশ্রমিকও নিতেন। অপরদিকে, পিয়াসা অতীতে একাধিক বিজ্ঞাপন, উপস্থাপনা এবং রিয়েলেটি শো’য়ের প্রতিযোগী ছিলেন। তবে নিকট অতীত ও বর্তমানে এই সেক্টরে তার কোনও কাজ পাওয়া যায়নি। দুজনের আয়ের উৎস ও পেশার বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। দুই দফা রিমান্ড শেষে এই দুই নারী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের অভিযোগে পিয়াসা মাহবুবকে গত ১ আগস্ট রাতে বারিধারা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তার ঘর থেকে চার প্যাকেট ইয়াবা ও ৯ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। ফ্রিজে পাওয়া যায় সিসা তৈরির কাঁচামাল। একইদিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় মৌ আক্তারকে। তার বাসা থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসামিরা যে পরিচয়ই দেক না কেন, মামলার তদন্তের সময় প্রত্যেক আসামির পেশা, বয়স, বিস্তারিত ঠিকানা, পরিচয়, পূর্বের অপরাধ নিশ্চিত হয়ে চার্জশিট বা প্রতিবেদন দিতে হয়। সেক্ষেত্রে পিয়াসা ও মৌয়ের পেশা ও পরিচয় নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে। তারা যেসব তথ্য দিচ্ছে সেগুলো আবার ভেরিফাইড করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পিয়াসা নিজেকে মডেল হিসেবে বোল্ডলি উল্লেখ করেছেন জিজ্ঞাসাবাদের সময়। বিভিন্ন কাজের উদাহরণও দিয়েছেন তিনি। তবে সেগুলো অনেক পুরানো কাজ। বর্তমানে তিনি কোনও কাজ পাননি বলে কাজ করেনি বলেও জানিয়েছেন। নিজেকে কখনো কখনও ব্যবসায়ী বলেও উল্লেখ করেছেন।’
সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এখন অনুসন্ধানের মাধ্যমে ক্রসচেক করছে বলেও জানান তিনি। তাদের মডেল পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মডেলিংয়ের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা থাকলেও কতটি কাজ করলে একজনকে মডেল বলবেন? সেটাতো নির্দিষ্ট না। কেউ একটা কাজ করেও বিখ্যাত হন, পরিচিতি পান। আবার কেউ একাধিক কাজ করেও পরিচিত পান না। পিয়াসার কিছু মডেলিংয়ের তথ্য পেলেও মৌয়ের কিছুই মিলে নি। তারা মডেল না অভিনেত্রী, সেটা বিষয় না, তাদের আয়ের উৎস যেটা পাওয়া যাবে সেটা নিশ্চিত হলেই তাদের পেশাও নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট অপর একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে পিয়াসা ও মৌ কেউই মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত না। তাদের মোবাইলের কথোপকথন, ব্যাংক লেনদেন এসব চেক করা হচ্ছে। বেশ কিছু তথ্য মিলছে। দেশের বিভিন্ন ক্লাব, রিসোর্টে তাদের যাতায়াত ছিল, দেশি-বিদেশি অনেকের সঙ্গেই তাদের সখ্যতা ছিল। আবাসন ব্যবসায়ী, গাড়ি ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ীসহ অনেকের সঙ্গেই তাদের বিভিন্ন বিষয় কথা হতো। সেসব কথোপকথন যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।’
পিয়াসা ও মৌ গ্রেফতারে পর পুলিশ তাদের মাদক ব্যবসায়ী ও পার্টি আয়োজক বলে দাবি করেছে। তারা বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলেও পুলিশ দাবি করেছে। ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ উপর্জনের অভিযোগও আনা হয়। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কোন মামলা বা লিখিত অভিযোগ করেনি।
পিয়াসা ও মৌয়ের মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পশ্চিমের বিশেষের পুলিশ সুপার খালেদুল হক হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মামলার তদন্তের এই মূহূর্তে কোনও মন্তব্য করতে পারবো না। তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হলেই তাদের সবকিছুই বের হবে।’
এদিকে পিয়াসা ও মৌসহ কয়েকজন গ্রেফতারের পর তাদের ‘মডেল’ বলায় লিখিত বিবৃতি দেয় অভিনয় শিল্পী সংঘ। সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ব্যক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্য, কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোরে দু-একটি বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কি না সেই ভাবনাটা জরুরি হয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেউ কোনও টাইম পাসিং সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে, ফ্রেন্ডলি মেইড ভিডিওতে অভিনয় করেছে, মডেল হিসেবে হয়তো ছবি আছে বাসার পাশের কোনও টেইলরের দোকানে অথবা একটা দুইটা বিলবোর্ডে, সে-ও সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেকে অ্যাক্টর বা মডেল দাবি করছে। অথচ মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জন্য যে নিষ্ঠা, একাগ্রতা, জ্ঞান, দর্শন, প্রস্তুতি, সামাজিক ও পেশাদার দায়বদ্ধতা প্রয়োজন সেসবের কিছুই তার নেই। আবার হুট করে এসেও কেউ মডেল বা অভিনেতা হয়ে ওঠে না তা-ও না। সে ক্ষেত্রে শতভাগ একাগ্রতার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে হয় আরো ভালো কাজের জন্য এবং শিল্পী হিসেবে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।’
আহসান হাবিব নাসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন ‘নতুন যারা আসছেন তারাও কাজ করবেন। কিন্তু দুই-একটি কাজ করলেই তারাও শিল্পের মর্যাদা পাবেন কিনা, তা ভাবতে হবে। সাম্প্রতিক যা ঘটছে এতে আমরা নিজেরাই আমাদের ক্ষতি করছি। আমাদের নাটক-সিনেমার যেমন গ্রহণযোগ্যতাও আছে আবার অবজ্ঞাও আছে। এই অবজ্ঞা বাড়িয়ে বাংলাদেশের দর্শককে আরও বিদেশমুখী করে না তুলি সেটাও আমাদের ভাবতে হবে।’