নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা কে দেবে

২ ফেব্রুয়ারি ছিল জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। মানুষকে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে ২০১৮ সাল থেকে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল, ‘সকলের খাবার হোক নিরাপদ, সমৃদ্ধ থাকুক প্রিয় এই জনপদ’।
২০১৩ সালে দেশে নিরাপদ খাদ্য আইন পাস হয়। এরপর শত শত অভিযান এবং সঙ্গে জরিমানা করা হলেও এখন পর্যন্ত শতভাগ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হয়নি। বরং প্রতিনিয়ত ভেজালে নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। ভেজালবিহীন খাদ্য দুর্লভ হয়ে উঠছে।
শুধু চট্টগ্রামেই গত এক বছরে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, বেকারি ও গুদামে ৫০টির বেশি অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশান ও জেলা প্রশাসন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এসব অভিযান পরিস্থিতি বদলাতে সামান্যতম অবদানও রাখতে পারেনি। বরং অধিকাংশ রেস্তোরাঁ ও কারখানায় দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয় খাদ্যপণ্য। খাদ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে রং, রাসায়নিকসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ। অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযান চালিয়ে জরিমানা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে এরপরও অসাধু ব্যবসায়ীরা সতর্ক হচ্ছেন না।
এরই মধ্যে গত ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার একটি কারখানা থেকে প্রায় ৯০০ কেজি ভেজাল মসলা জব্দ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এসব মসলা তৈরির উপকরণ ছিল কাঠের গুঁড়া, তুষি ও ক্ষতিকর রং। এ ছাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ভেজাল মসলা জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এসব অভিযানে কর্মকর্তারা দেখতে পান, মসলা তৈরির কারখানাগুলোতে ব্যবহার করা হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক হাইড্রোজ। সঙ্গে মেশানো হচ্ছিল কাপড়ের রং, ইট ও কাঠের গুঁড়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ডের একটি কারখানা থেকে প্রায় দেড় হাজার কেজি কোমল পানীয়, টমেটোর সস ও মধু জব্দ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও র‌্যাব। বিষাক্ত রাসায়নিকের সঙ্গে ফলের ফ্লেভার ও কাপড়ের রং মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল এসব। এর আগে ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটা এলাকায় একটি শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
ভেজাল খাদ্যের ফলে মানবদেহে লিভার, কিডনি ও পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া নানা ধরনের অ্যালার্জি ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ভেজাল খাদ্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। এরপরও থামানো যাচ্ছে না খাদ্য ভেজাল করার মতো অপরাধ। এর বড় কারণ হলো, শুধু জরিমানা আর অর্থদণ্ড দিয়ে এটা রোধ করা সম্ভব না। চরম দণ্ড দিলেই যদি কিছুটা রাশ টানা যায়।