নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি ছাত্রীদের

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান

ছাত্রীদের রাত ১০টার আগেই হলে প্রবেশের নির্দেশ

চবি প্রতিনিধি

নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি এবং ছাত্রী হেনস্তাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রীরা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলমান ছিলো।
বুধবার (২০ জুলাই) রাত ৯.৩০ এ প্রীতিলতা হল থেকে মিছিল নিয়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় অন্যান্য কয়েকটি হলের ছাত্রীরাও আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দেন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করো, ছাত্রী হেনস্তাকারীর বিচার করো,সান্ধ্য আইন বাতিল কর, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
এসময় অবস্থান কর্মসূচি থেকে ৩ টি দাবির বাস্তবায়ন চাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অকার্যকর যৌন নিপীড়ন সেল বাতিল করা। রাত ১০ টার পরে হলে প্রবেশের নির্দেশ বাতিল করা।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা মিম সোনিয়া বলেন, অতীতে ছাত্রী হেনস্থার ঘটনার বিচার হয়নি দেখেই অপরাধীরা সাহস পাচ্ছে। প্রশাসন অপরাধীদের না ধরে উল্টো ছাত্রীদের উপর মনগড়া দাবি চাপিয়ে দিচ্ছে।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফী নিতু বলেন, এর আগেও আমরা দেখছি যেকোনো ছাত্রী হেনস্তা হলে বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু একটি হেনস্তার ও বিচার হয়নি। আমরা ২৪ ঘণ্টা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই।
ছাত্রীদের রাত ১০টার আগেই হলে প্রবেশের নির্দেশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক ছাত্রীদের রাত দশটার মধ্যে হলে প্রবেশ করার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সম্প্রতি এক চবি ছাত্রী হেনস্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এই নির্দেশকে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলছে অনেকেই।
বুধবার (২০ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল হাসান ভূঁইয়া। তিনি জানান, মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও ছাত্র উপদেষ্টার সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা ছাত্রীদের কল্যাণ চাই। রাত ১০টার পরে কোনো শিক্ষার্থীরই বাইরে থাকা কাম্য না। আমি অনুরোধ করবো, ছাত্রীরা যেন শৃঙ্খলার স্বার্থে এবং নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই নির্দেশ মেনে চলেন।
প্রশাসনের এই নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। অনেকে সমর্থন করলেও কেউ বলছেন এটি ছাত্রীদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহবায়ক ইসরাত হক জেরিন বলেন, এই আদেশ সান্ধ্য আইনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টকে কেন্দ্র করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুবই হাস্যকর যে প্রশাসন অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারছে না। উল্টো ছাত্রীদেরকে আবদ্ধ করে রাখতে চাইছে। বিষয়টি এমন দাঁড়াচ্ছে ক্রাইম হবে তাই ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। অথচ প্রশাসনের উচিত ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই জায়গায় তারা ব্যর্থ হয়ে মেয়েদের ওপর নিজেদের মনগড়া নির্দেশ চাপিয়ে দিচ্ছে।
শাখা ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি প্রত্যয় নাফাক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তমত চর্চার জায়গা। কারো ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া কখনোই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। রাত ১০টার পরে ছাত্রীদের যেকোনো কাজই থাকতে পারে। কিন্তু ১০টার পরে বাইরে গেলে আমি নিরাপদ না, এই ভয়ের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এটি প্রশাসনের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের ফসল।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই রাতে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠে অজ্ঞাত ৫ তরুণের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ছাত্রী থেকে জানা যায়, প্রীতিলতা হলসংলগ্ন এলাকায় বন্ধুর সঙ্গে হাঁটছিলেন তিনি। এ সময় পাঁচ তরুণ তাদের গতিরোধ করে জেরা করতে থাকে। একপর্যায়ে দুজন কোনো কারণ ছাড়াই তাদের মারধর করে। প্রায় এক ঘণ্টা আটকে রেখে ছাত্রী ও তার বন্ধুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে তারা। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের মানিব্যাগ ও মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তরুণরা চলে যায়।