নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে মিয়ানমারকে

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিথং ও রাসেথং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করলে দলে দলে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের আশ্রয় দেয়। কিন্তু এ ঘটনার ছয় বছর পার হয়ে গেলেও মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আলোচনার নামে শুধু কালক্ষেপণ করেছে।
এরপর ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে)-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলা করেছিল ওআইসিভুক্ত দেশ গাম্বিয়া। বলা হয়েছিল, মিয়ানমারকে তার নিজ দেশের নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নির্মম আচরণের জন্য জবাবদিহি করানোই গাম্বিয়ার লক্ষ্য। গাম্বিয়া ৪৬ পৃষ্ঠার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের আবাস ধ্বংসের অভিযোগ তুলেছিল।
এবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় পক্ষভুক্ত হতে কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে এবং এককভাবে মালদ্বীপ নেদারল্যান্ডসে হেগ- এ অবস্থিত আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) আবেদন করেছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালত সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে। দেশগুলো আইসিজে-তে একটি যৌথ বিবৃতি দাখিল করেছে। এতে ১৯৪৮ সালের গণহত্যার অপরাধ প্রতিরোধ ও সাজা বিষয়ক সনদের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ সনদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অভিন্ন স্বার্থে তারা এই গণহত্যা মামলায় অন্তর্ভুক্ত হতে চায়।
গতবছরের জুলাইয়ে গণহত্যা মামলা প্রক্রিয়া চালাতে মিয়ানমারের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করে আইসিজে। এতে মামলাটির শুনানি পুরোপুরি অনুষ্ঠানের পথ সুগম হয়। যদিও মিয়ানমার গণহত্যার কথা অস্বীকার করেছে এবং জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধান মিশনে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তা পক্ষপাতদুষ্ট এবং ত্রুটিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছে।
মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার সাতটি প্রভাবশালী দেশ ও মালদ্বীপ এবার মামলায় পক্ষভুক্ত হওয়ায় মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে তাতে সন্দেহ নেই। অন্তত গত পঞ্চাশ বছর ধরে নিপীড়নের শিকার মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়ক হবে।
এদিকে দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের কুফল দেখা দিয়েছে মিয়ানমারের। দেশটিতে স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীগুলোর ক্রমাগত চাপে জান্তা শাসক দেশটির সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের জরুরি পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়েছে। দেশটির বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্রোহী বাহিনীর ‘তীব্র হামলার’ মুখে পড়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার জান্তা সরকার থেকে এমন নির্দেশ আসে বলে জানান দেশটির একজন সরকারি কর্মকর্তা। এর আগে জান্তা সরকার প্রধান উদ্বেগ জানিয়ে বলেছিলেন, মিয়ানমার টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।
ঠিক এই সময়ে আইসিজে-তে রোহিঙ্গাদের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাতে বাংলাদেশ থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করার সুযোগ তৈরি হবে।