নগরের পুকুরগুলো রক্ষা করা হোক

আবারও নগরে অবস্থিত স্বল্পসংখ্যক পুকুরগুলো ভরাট করার তোড়জোড় শুরু করেছে একশ্রেণির অর্থলিপ্সু, বিবেকহীন মানুষ। ২০১৬/১৭ সালের দিকে নগরীর কাপাসগোলা এলাকার মুনশি পুকুর ভরাটের চেষ্টা হলে তা রুখে দেয়া হয় সম্মিলিতভাবে। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা ছিল স্থানীয় সচেতন যুবসমাজ ও মুরুব্বিমহলের। পাশাপাশি পত্রপত্রিকাগুলোতে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ভূমিদস্যু ও তথাকথিত প্রভাবশালীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
এ ধারা কি মনসুরাবাদ এলাকায়ও উজ্জীবিত হতে পারে না? নাকি তা স্তিমিত হয়ে গেছে অর্থের দাপটের কাছে? এই শঙ্কার চিত্র ফুটে উঠেছে একটি স্থানীয় দৈনিকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। জানা যাচ্ছে, মনসুরাবাদের খানসাহেব আবদুল হাকিম মিয়া সড়কের মিয়াবাড়ির গুরা পুকুরটি ভরাটের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীমহল। প্রায় ১৫ শতকের পুকুরটির তিনদিকে বাঁশের ঘেরা দিয়ে এ ভরাটকর্ম সম্পন্ন হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ১৫/২০ দিনের মধ্যে ওই এলাকার আরো দুটি পুকুর ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে খারাপ দৃষ্টান্ত রেখে। মনসুরাবাদ এলাকাটি এমনিতে ঘনবসতিপূর্ণ এবং পুরো এলাকাজুড়ে ৩৫ হাজার বস্তি ও কলোনি বাসা রয়েছে। এখন ভরাট করা হচ্ছে যে পুকুরটি তাও যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় ওই এলাকিিট মরুভূমির আকার ধারণ বলে স্থানীয় অভিজ্ঞমানুষের অভিমত। অগ্নিকা-ের মতো দুর্ঘটনা এসব বস্তি ও কলোনি ঘিরে নিত্যই সংঘটিত হতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যে পরিমাণ পানিধারণে সক্ষম তা দিয়ে একটি ছোটখাট অগ্নিকা-ের ঘটনাও সামাল দেয়া সম্ভব নয়।
এমন অবস্থায় তাদের হন্যে হয়ে খুঁজতে হয় অগ্নিকা-ের কাছে-ধারের পুকুরের জল। আর এসব পুকুরই তখন জলভা-ার উন্মুক্ত করে দিয়ে গরিব-অসহায় মানুষের মাথাগোঁজার ঠাঁইগুলো কিছুটা হলেও রক্ষায় অবদান রাখে। এছাড়া মানুষের বসতি ঘিরে পুকুরের অবস্থান পরিবেশচেতনার দিক থেকেও অত্যন্ত উত্তম একটি ব্যাপার। খোলা হাওয়া ও মুক্তদৃষ্টি বিস্তারের অনুকূলে পুকুর অনেকটা মাতৃময়ী স্নেহধারার মতো আনন্দদায়ী। এর বাস্তবতা উপলব্ধি করা যাবে একালের আবাসিক এলাকার পরিকল্পনায় লেক বা হ্রদের অপরিহার্য সংযোজনের বিষয়টি ভাবলে।
গোটা নগর ব্যবস্থাকে যদি মানব শরীরের সঙ্গে তুলনা করা যায়, পুকুর হলো সেখানে চোখের সমান মর্যাদা পাওয়ার দাবিদার। অর্থাৎ মানুষের শরীরে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুষম উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তার যতি চোখই না-থাকে, তাহলে ব্যাপারটা কী দাঁড়ায়! নগরেও তেমন স্থানে-স্থানে কিছু বড়-বড় পুকুরের অস্তিত্ব বজায় রাখা দরকার স্বচ্ছ নাগরিক জীবনের সপক্ষে। এক্ষেত্রে সচেতন নাগরিক সমাজের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি মনসুরাবাদের পুকুরটি রক্ষায় সোচ্চার ভূমিকা রাখেন, নিশ্চয় ভালো ফল পাওয়া যাবে। ঠিক যেমন মুনশি পুকুরটি রক্ষায় প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল ভরাটকারীরা।
একই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে মনসুরাবাদের মিয়াবাড়ির গুরা পুকুরটি রক্ষায় সচেতন নাগরিক সমাজ এগিয়ে আসবে, এমন প্রত্যাশা।