দ্রব্যমূল্যের পাইকারি ও খুচরায় যৌক্তিক হার নির্ধারণ করা উচিত

চেম্বারে মতবিনিময় সভা

‘কোভিড অতিমারির ২ বছর ও সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্য পৃথিবীব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন নতুন করে লকডাউন দেয়ার কারণে তৈরিপোশাক খাতের অনেক কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এক কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকিমূল্যে নিত্যপণ্য প্রদানে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছে। চিটাগং চেম্বারও প্রতি বছরের মত ভর্তুকিমূল্যে চাল, চিনি ইত্যাদি বিক্রয় করছে।’
গতকাল চট্টগ্রাম চেম্বারের উদ্যোগে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম এ কথা বলেন। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মিলার, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা জরুরি। বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র মিল রয়েছে। কাজেই আমদানি উৎসাহিত করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে ফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানি করা যায়। এছাড়া ডিউটি স্তর সামঞ্জস্য করা হলে আমদানি বৃদ্ধি পাবে এবং বর্তমান সংকট কেটে যাবে। ঈদের মত উৎসবের প্রায় ৩-৬ মাস আগে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে মতবিনিময় আয়োজন করে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। পাইকারি ও খুচরা সবক্ষেত্রে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের তালিকা প্রকাশ এবং উভয়ের মধ্যে দামের পার্থক্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু রায়হান দোলন, সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশ, চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এ কে এম আক্তার হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ ও মো. রকিবুর রহমান (টুটুল), খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বি এস এম গ্রুপ চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, মীর গ্রুপ’র চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সালামত আলী, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, আখতারুজ্জামান সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ, ক্যাব’র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বাহার সাবেরী ও পুলিশ প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সায়েম।
চেম্বার সভাপতি মিল গেটে সরকার নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রয়সহ এসও, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে জোরদার মনিটরিং এর মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে কাজ করার কথা জানান।

চট্টগ্রাম চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখার লক্ষ্যে সচেতনতা ও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টিতে বিশেষ সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
চেম্বার পরিচালক এ কে এম আক্তার হোসেন দ্রুতগতিতে পণ্য খালাস করা, চট্টগ্রাম থেকে আইপি কোয়ারেন্টাইন ইস্যু করা এবং যথাসময়ে বিএসটিআই সনদ প্রদানের দাবি জানান।
চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, রপ্তানির বিপরীতে ডলারের দাম পাওয়া যায় প্রায় ৮৫ টাকা এবং আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের মূল্য পরিশোধ করতে হয় প্রায় ৯০ টাকা। তিনি এ পার্থক্য দূর করা এবং এইচএস কোড ভুল হওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জরিমানা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, রমজান উপলক্ষে ভোগ্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনে ঘাটতিজনিত বাজার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভোক্তাসাধারণ যাতে সহনীয় এবং ন্যায্যমূল্যে দ্রব্যমূল্য ক্রয় করতে পারে এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে যাচ্ছে।

মহাপরিচালক চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস হ্রাসকরণের জন্য চট্টগ্রাম থেকে আইপি ইস্যু/নবায়ন যাতে করতে পারে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানান।
তিনি কতিপয় পণ্যের উৎপাদন থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত কিছু অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে আগামীতে যাতে কোন অনিয়ম হতে না পারে এবং মনিটরিং করার জন্য একটি অ্যাপস তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি ব্যবসায়ীদের দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি মন্তব্য করে তাদের যাতে অহেতুক মুনাফালোভী, সিন্ডিকেট সৃষ্টিকারী না বলে এবং মিডিয়া যাতে ইতিবাচক নিউজ করে এ ব্যাপারে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স) মো. ইকবাল হোসেন পিপিএম বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে মহাসড়কে কোন ধরনের হয়রানি যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেকোন অভিযোগ পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আবু রায়হান দোলন বলেন, চট্টগ্রামে প্রায় পাঁচ লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার ফ্যামিলি কার্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে আঠারটি এবং মহানগরে ছয়টি মনিটরিং টিম কাজ করছে। সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবদুল ওয়ারিশ বলেন, ব্যবসা নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুুলিশ কাজ করছে। যানজট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া রাস্তায় কোন পণ্যবাহী পরিবহন থামানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অন্য বক্তারা ফিনিশড প্রোডাক্ট ও আনফিনিশড প্রোডাক্ট আমদানির ক্ষেত্রে ডিউটি স্ট্রাকচার যৌক্তিকহারে নির্ধারণ, পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা, অতীতের আইনসমূহ যুগোপযোগী করা, চাহিদার পূর্বাভাস প্রাক্কলন, বেশি বেশি আমদানি উৎসাহিত করা, মিল থেকে মেমো অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা, যানজট নিরসন ও অস্থায়ী দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ, আমদানিকারকদের তালিকা প্রস্তুত করা, চাহিদার সঠিক তথ্য সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব প্রদান, তিন মাস আগে শুল্ক সমন্বয় করা, লোকাল এলসি’র ক্ষেত্রে ২% কর প্রত্যাহার করা, নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে সারা বছর ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরেন। বিজ্ঞপ্তি