দুই মাসের মধ্যে অর্ধেক ইউরোপ অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবে

বাংলাদেশেও বাড়ছে সংক্রমণের হার

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে, আগামী ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে অর্ধেক ইউরোপ করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপের আঞ্চলিক পরিচালক ড. হান্স ক্লুজ বলেছেন, ইউরোপের পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অমিক্রনের একটি ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। সেটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকেও ছাড়িয়ে গেছে।

২০২২ সালের প্রথম সপ্তাহেই ইউরোপে ৭০ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তার ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই পূর্বাভাস দিয়েছে।

দুই সপ্তাহের মধ্যেই অমিক্রন সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

”বর্তমানে অমিক্রন সংক্রমণের একটি ঢেউ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বয়ে যাচ্ছে। যেসব দেশ ২০২১ সালের শেষ দিকে ডেল্টার বিস্তার ঠেকাতে কাজ করছিল, সেসব দেশেও এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে,” বলেছেন মি. ক্লুজ।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১২৮টি দেশে অমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশেও বাড়ছে সংক্রমণের হার

মঙ্গলবার বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৪৫৮ জন। প্রায় চারমাস পরে দেশটিতে দৈনিক রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে রোগী শনাক্তের হার আট শতাংশের বেশি।

তবে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হলেও নতুন রোগীদের মধ্যে কতজন অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট, সেটা জানায়নি কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত অন্তত ২৪ জন অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন বলে সরকারি সূত্রগুলো জানাচ্ছে।

কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের একজন বিজ্ঞানী কয়েকদিন আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশে আগামী তিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এখনও মানুষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেই বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু অমিক্রনের সংক্রমণ শক্তি বেশি হওয়ায় আরও বেশি সংখ্যক লোক আক্রান্ত হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।

নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনসহ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে নানা ধরণের বিধিনিষেধ জারি করেছে বাংলাদেশের সরকার।

সেসব বিধিনিষেধের মধ্যে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, রেস্তোরাঁয় খাওয়া ও আবাসিক হোটেলের থাকার জন্য করোনা টিকা সনদ দেখানো, গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন, টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার মতো পদক্ষেপ রয়েছে।

অমিক্রনের লক্ষণগুলো কী কী?

অনেক মানুষের কাছে অমিক্রন সাধারণ ঠাণ্ডার মতো মনে হবে। অনেকে বলেছেন, অমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের গলা শুকিয়ে যাওয়া, সর্দি লাগা, শরীরের জয়েন্টে ব্যথা বা মাথা ব্যথা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুনশি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”অমিক্রনের লক্ষণগুলো খুবই হালকা ধরনের হয়। ডেলটা বা অন্য ধরনগুলোর মতো অতোটা প্রকট নয়। অনেকের ফুসফুসের ওপরের দিকে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত সিকোয়েন্সিং করে এটা শনাক্ত করা যায়।”

তবে তিনি বলছেন, করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা গেলেই যেসব সতর্কতা নেয়ার কথা বরাবর বলা হয়েছে, সবাইকে সেগুলো নিতে হবে। শুধু অমিক্রনের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা নেয়ার নেই।

এর আগের করোনাভাইরাসের ধরনগুলোয় আক্রান্ত হলে স্বাদ বা গন্ধ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটতো। এছাড়া কাশি এবং উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হতো। এখনো করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এই তিনটি প্রধান লক্ষণ।

চিকিৎসকরা বলছেন, অমিক্রনে আক্রান্ত হলে অনেক সময় হালকা ঠাণ্ডা বা সাধারণ অসুস্থতার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এছাড়া আরও যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে:

  • বুকের ওপরের অংশে ব্যথা
  • মাথা ব্যথা, জ্বর
  • ক্লান্ত লাগা
  • শরীরে ব্যথা
  • গলা শুকিয়ে যাওয়ার অনুভূতি

শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক তৌফিক আহমেদ বলছেন, ”যদিও ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অমিক্রন অনেক বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তে জানা যাচ্ছে, অমিক্রন একটু হালকা ধরনের, আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার কম।”

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. আব্দি মাহামুদ বলেছেন, ”অমিক্রন যে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কম ক্ষতিকর, সেটি বলার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। সুতরাং মুল বার্তা হলো, আপনি যদি টিকা নিয়ে থাকেন, তাহলেই আপনি নিরাপদ।”

যে দেশে প্রথম অমিক্রন শনাক্ত হয়, সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় রোগটি পিক অবস্থায় চলে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা