তরুণদের স্বপ্ন দেখতে হবে, অনেক বড় স্বপ্ন : সুফি মিজানুর রহমান

সুপ্রভাত ডেস্ক »

তরুণ প্রজন্মের হাতেই নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তবে তাদের আরও উদ্যমী হতে হবে। তরুণদের স্বপ্ন দেখতে হবে; অনেক বড় স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে করতে হবে অক্লান্ত পরিশ্রম। সেই পরিশ্রম করতে হবে দেশের জন্য, মানুষের জন্য- এমনটিই মনে করেন দেশের অন্যতম সফল শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তরুণদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, জীবনে বড় হওয়ার যে তাগিদ সেটা কারও কাছ থেকে ধার করা যায় না। সেটা নিজের ভেতর থাকতে হবে। সেটাকে লালন করে, পরিচর্যা করে বড় করতে হয়। জীবনের সব বাধা-বিপত্তিকে মোকাবিলা করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সৃষ্টিকর্তা সবাইকেই শক্তি দিয়েছেন। কিন্তু সেই শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য একটা ধাক্কার প্রয়োজন হয়; প্রয়োজন হয় অনুপ্রেরণার, উদ্দীপনার। সেই সঙ্গে একটা পরিবেশও লাগে। সেটা নির্ভর করবে আপনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কতটুকু পরিশ্রম করবেন, তার ওপর। আপনার মধ্যে যদি উদ্যোগ নেওয়ার শক্তি থাকে, তা হলে কোনো প্রতিবন্ধকতাই আপনাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান তার ওপর নির্মিত চ্যানেল ২৪-এর এক প্রামাণ্যচিত্রে এসব কথা বলেন। পঞ্চাশের প্রকৃতজন শিরোনামে বিশেষ এ প্রামাণ্যচিত্রটি ঈদ অনুষ্ঠানমালার তৃতীয় দিন গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায়, বিকাল সাড়ে ৩টায় ও রাত সাড়ে ৯টায় চ্যানেল ২৪-এ সম্প্রচার হয়। তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় বার্তাবাহী এ প্রামাণ্যচিত্রে সুফি মিজান আরও বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত। তাই দেশের কেউ যেন অভুক্ত না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন- আমি এ দেশকে হীরার বাংলাদেশ বানাব। এ জন্য অতিপ্রাকৃতিক শক্তির প্রয়োজন নেই। দেশের মানুষের জন্য প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে কাজ করলেই যথেষ্ট। আমি বিশ্বাস করি, আমার দেশ বড় হলে আমার সন্তানরা কোনো দিন উপোস থাকবে না।

১৯৪৩ সালের মার্চে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন দেশবরেণ্য ব্যবসায়ী সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তার ব্যক্তিত্বের ছটায় প্রকাশ ঘটে অতি স্বচ্ছ, সাবলীল, সাধারণ ও মানবিক গুণাবলি। শিকড়েই তার আদর্শ, জন্মদাতা পিতার দীক্ষায় আজকের এই অবস্থানে এসেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সুফি মিজান বলেন, ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে জীবনবোধ, মূল্যবোধ, মানবীয় গুণাবলির বিকাশ সম্পর্কে দীক্ষা লাভ করেছি। তার দেখানো পথ ও আদর্শ অনুযায়ী চলেছি। মানুষকে ভালোবাসা, গুরুজনকে শ্রদ্ধা করা, ছোটদের স্নেহ করা এবং মানুষের উপকার করা- এর সবই তার কাছ থেকেই শিখেছি।

উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর ১০০ টাকা বেতনে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন সুফি মিজান। পরবর্তীকালে যোগ দেন ব্যাংকে, কর্মকর্তা হিসেবে। যদিও বাবার উপদেশ ও হৃদয়লালিত স্বপ্ন নিয়ে সফল ব্যবসায়ী হওয়ার চিন্তায় ডুবে থাকতেন সব সময়। তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে শুরু করেন ব্যবসা। সুফি মিজান বলেন, আমি যে ব্যাংকে ছিলাম, সেখানেই গেলাম ব্যবসার জন্য ঋণ নিতে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আশস্ত করতে সমর্থ হলাম যে, দেশে ব্যবসা করার অনেক বড় সুযোগ রয়েছে। তখন একটা নিয়ম ছিল যে, ব্যাংক যদি ইচ্ছা করে তা হলে একটি ব্যবসার জন্য শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারবে। আমিও সে সুযোগটা পেলাম। তিনি যোগ করেন, প্রথমে জাপান থেকে টায়ার আমদানি শুরু করলাম। আমদানির চেয়ে চাহিদা ছিল অনেক বেশি। পণ্য দেশে এসে পৌঁছার আগেই বিক্রি হয়ে যেতে লাগল। সবার আগে আমি ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করি। এভাবে বেশ কিছু লেনদেন যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পর ব্যাংকের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। এভাবে পথ চলতে চলতে ১৯৮২ সালের দিকে আমরা শিল্প-কারখানার দিকে এগোলাম।

এর পরের গল্প শুধু সফলতার। সুফি মিজানের গড়া পিএইচপি গ্রুপের শুরুটা চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা শিল্প দিয়ে। এর পর একে একে কাচ, ইস্পাত, পেট্রোকেমিক্যালসহ বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত হয়েছে এ গ্রুপ। এখন পিএইচপি গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫টি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কর্মরত। স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি বেস্ট বিজনেস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে।

আমার কথা হচ্ছে- কোম্পানি যদি কখনো লোকসানে পড়ে, উপোস থাকতে হলে সবার প্রথমে আমি উপোস থাকব। এর পর প্রয়োজন হলে অন্যরা। আমি খাব আর পিএইচপি পরিবারের সদস্যরা উপোস করবে, তা হবে না।

সুফি মিজানের এ সফলতার নেপথ্য দর্শন- কঠোর শ্রম ও সততা। এ দুইয়ের ওপর ভর করে তিনি আজ পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে তিনি সহায়তা করেন উদার হাতে। অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়েছেন মানুষের কল্যাণে। এর সর্বোচ্চ স্বীকৃতিও পেয়েছেন। দেশের দ্বিতীয় শিল্পপতি হিসেবে এবং জীবদ্দশায় প্রথম শিল্পপতি হিসেবে তিনি ভূষিত হয়েছেন একুশে পদকে।