ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা শিবির

কক্সবাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছেন ১২ লাখেরও বেশি নানা বয়সের রোহিঙ্গা নাগরিক। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। তারা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা নয়ন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয় ক্ষতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘মোখা’ মোকাবিলায় বিশেষ পরিকল্পনা এ লক্ষ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। সাড়ে ৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে। স্বাস্থ্য বিভাগের জরুরি মেডিকেল দল ও মোবাইল মেডিকেল দল প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান শনিবার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের নেতৃত্বে সাড়ে চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। সেখানে যেহেতু পাহাড়ের ওপর জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা নেই। কিন্তু বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধস হতে পারে। এই আশঙ্কা মাথায় রেখে স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোখাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য এপিবিএনসহ সব সংস্থাকে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

শনিবার (১৩ মে) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে তেজগাঁও মহিলা কলেজের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গারা যাতে কাঁটাতারের বেড়া ক্রস করে বের হতে না পারে এজন্য সজাগ আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষকে সহায়তা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্র
কক্সবাজারে ৫৭৬ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩২ হাজার ২৭৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা আশ্রয়ণকেন্দ্রে আশ্রয় নেন।জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুম থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, জেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৮ হাজার ৬০০ জন এবং রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ২ হাজার ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। সেন্টমার্টিনে নেভি, কোস্ট গার্ড, পুলিশসহ অন্যদের মিলিয়ে ৩৭টি সরকারি স্থাপনা রয়েছে। তাই সরকারি স্থাপনাগুলো সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য ২০ লাখ নগদ টাকা রাখা হয়েছে; যার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ৫.৯০ মেট্রিক টন চাল, ৩.৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩.৪ মেট্রিক টন শুকনা কেক, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন, ২০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। জেলায় যে ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেগুলোতে ৫ লাখ ৫৯৯০ জন লোক রাখা যাবে।

শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে মেডিক‌্যাল দল, কোস্ট গার্ড, নৌ-বাহিনী, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল, স্কাউট দল, আনসার বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শনিবার সকাল থেকে আমরা আশ্রায়কেন্দ্রগুলো খুলে দিয়েছি। উপকূলের মানুষ আসতে শুরু করেছেন। পুরো জেলার মধ্যে যেসব আশ্রয়কেন্দ্র ছিল সেখানে ৩২ হাজারের অধিক লোক এসেছেন। আশা করি, নিরাপত্তার জন্য আরও অনেকেই আসবেন।

কক্সবাজারে ১১২ হোটেলকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা
কক্সবাজার শহরের ১১২টি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার।তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা দ্রুত আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস সমিতি থেকে ৫৫টি হোটেল আশ্রয়ণকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। হোটেলের নাম ও মোবাইল নম্বরসহ আমরা প্রকাশ করেছি। মোখার ঝুঁকিতে থাকা লোকজন এখানে আশ্রয় নিতে পারবেন।এ ছাড়া সেন্টমার্টিনের সব হোটেল-রিসোর্ট আশ্রয়ণকেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

কক্সবাজার বিমানবন্দর সাময়িক বন্ধ
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে শনিবার (১৩ মে) সকাল ৭টা থেকে রোববার (১৪ মে) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কক্সবাজার বিমানবন্দর সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।