ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার দক্ষতা দেখাতে হবে

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মোখা। উপকূলে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত গতি সঞ্চার করে চলেছে। প্রায় সিডরের সমান গতিবেগ নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, উখিয়া অঞ্চলে মোখার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। এটি যখন তীরে আছড়ে পড়বে তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৬০ কিলোমিটারের বেশি। এর প্রভাবে যে বৃষ্টি হবে, তাতে পাহাড় ধসের শঙ্কা আছে। একটানা আট ঘণ্টার বেশি প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকে। প্রবল বৃষ্টি হতে পারে চট্টগ্রাম বিভাগে।
সতর্কবার্তা জারির পর চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন পাহাড়ে বসবাসরত ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানাধীন ফয়’স লেকসংলগ্ন ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল, ৩ নম্বর ঝিল, শান্তিনগর এলাকা; খুলশী থানাধীন লালখান বাজারের মতিঝরনা, বাটালি হিল, পোড়াকলোনি পাহাড়, চান্দগাঁও থানাধীন আমিন জুট মিলস পাহাড়, টাংকির পাহাড়, ভেড়া ফকিরের পাহাড়, বার্মা কলোনি পাহাড়ের বাসিন্দাদের নিতে তৎপরতা শুরু করেছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। চট্টগ্রাম মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ২৬টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৬ হাজার ৫৫৮। পাহাড়গুলোর মধ্যে সরকারি ১৬টি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০টি পাহাড় রয়েছে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। রবিবার (১৪ মে) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা ইতোমধ্যে বৈশ্বিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। গত শতকের ৯০ দশকের পর হতে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত প্রাণহানি ক্রমশই কমেছে। ঘূর্ণিঝড় হতে সুরক্ষায় স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা যে প্রক্রিয়ায় মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান, এটিও বিশ্বে বিরল উদাহরণ।
চট্টগ্রাম জেলায় বিভিন্ন উপকূলে বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশে প্রাণের ক্ষতি না হলেও সম্পদের ক্ষতি হতে পারে। বিষয়টা নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। বেড়িবাঁধসমূহের ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ কাম্য।
আমাদের প্রত্যাশা, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি যথাযথভাবে মোকাবিলায় সরকারি পর্যায়ে যেমন কোনো ফাঁক থাকবে না। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা যারা দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতোপূর্বে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের ভূমিকাও আগের মতো হবে। আমরা আশা করি দায়িত্ব পালনে কোথাও কোনো অবহেলা হবে না। যাতে করে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়।