ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের অবরোধে অচল চবি

ঢাউস কমিটি ঘোষণার পরও ক্ষোভ, ফটকে তালা
দুর্ভোগ শিক্ষার্থীরা, হয়নি ক্লাস-পরীক্ষা

চবি প্রতিনিধি »

গভীর রাতে ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান বা পদ না পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগের কিছু নেতার অনুসারীরা।
রোববার রাত সোয়া ১২টার দিকে ছাত্রলীগের ফেইসবুক পেইজে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী।
এদিকে সোমবার সকালে নগরীর পুরাতন রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের লোকো মাস্টারকে ধরে নিয়ে গেছে একদল যুবক। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনও ছেড়ে যায়নি। ৪ ঘণ্টা পরে চালককে ছেড়ে দিলেও শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
চলতি বছওে ছোটখাটো অজুহাতে ৭-৮ বার বিশ্ববিদ্যালয় অবরুদ্ধ করেছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
প্রায় ৩ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ৪২৫ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির সহ-সভাপতি রাখা হয় ১১৮ জনকে। তবে এতো বিশাল সদস্যের কমিটিও খুশি করতে পারেনি নেতাকর্মীদের। কমিটি ঘোষণার পরেই স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে এই কমিটি বর্জন করে ছাত্রলীগের একাংশ। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলের রুম ভাঙচুর করে তারা। সকাল থেকে শুরু হয় টানা অবরোধ। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। সারাদিন অবরুদ্ধ থাকা ক্যাম্পাসে রাত নেমে এলেও আসেনি কোনো সমাধান। এমনকি ক্লাস-পরীক্ষা চলবে কিনা তার ব্যাপারে নিশ্চিত নয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আন্দোলনকারীরা গতকাল বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন করে ৫ দফা দাবি পেশ করে। তারা জানায় এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার অবরোধ চলবে। তাদের ৫ দফা দাবিগুলো হল।
মো. ইলিয়াসকে (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিজয় গ্রুপের নেতা) ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি বর্ধিত করা, সকল অছাত্র, শিবির, বিএনপি-জামায়াত ও বিবাহিত কর্মীদের ঘোষিত কমিটি থেকে বাদ দেওয়া, তাদের ৫০জন ত্যাগী, মেধাবী ও নিয়মিত ছাত্রদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রদান করা, পদবীতে সিনিয়র জুনিয়র ক্রম ঠিক করা।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, এই ক্যাম্পাস একসময় জামায়াত শিবিরের আখড়া ছিলো। অনেক ছাত্রলীগ কর্মীর ত্যাগের বিনিময়ে আজকে তা ছাত্রলীগের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। কিন্তু আফসোস হচ্ছে সেসকল ত্যাগীদের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের ডাক দিই। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এসব ব্যাপারে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া জানান, তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদের জন্য আন্দোলন করছে। এখন তাদেরকে তো আমরা পদ দিতে পারি না। এই দায়িত্ব আমাদের হাতে নেই। আমরা বারবার তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেছি। তাদেরকে কয়েকবার আন্দোলন থেকে সরিয়েও দিয়েছি। কিন্তু তারা অবরোধ থেকে সরে আসছে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।
শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা শিকার করে প্রক্টর বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারাও শিক্ষার্থী। ছাত্রনেতাদের উচিত যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করা।