ছাড় দিয়ে হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জরুরি

ঐতিহাসিকভাবেই চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে শক্তিশালী মিত্রতা গড়ে তুলছে চীন। এই দেশটিকে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের প্রভাব নিশ্চিত করার চাবিকাঠি মনে করে।
চলতি মাসের মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় পাইলট ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। তারই অংশ হিসেবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগেই রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ-পরিস্থিতি গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখে মিয়ানমার ঘুরে এসেছেন ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য সবচেয়ে জরুরি নাগরিকত্ব সমস্যার সমাধান। অথচ এটা ছাড়াই নেপিদো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায়। রোহিঙ্গাদের দাবি, নাগরিকত্ব দিয়েই প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার বলেছে, প্রত্যাবাসন হতে হবে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ। বলপূর্বক পুনর্বাসন কোনো উপায় হতে পারে না।
রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলকে রাখাইনের বেশ কিছু গ্রাম, পুনর্বাসনকেন্দ্র, ট্রানজিট কেন্দ্রসহ নানা অবকাঠামো দেখানো হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মংডু শহরও দেখিয়েছেন। মংডু শহরে প্রচুর রোহিঙ্গা আছে। সেখানে (মংডুতে) ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা মুসলমান থাকেন।
মিয়ানমার ঘুরে আসা রোহিঙ্গারা বলেন, রাখাইনে প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ এবং পরিস্থিতি কোনোটাই নেই। ছয় বছর আগে ফেলে আসা তাঁদের (রোহিঙ্গাদের) জন্মভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে সেনা ব্যারাক, পুলিশ ফাঁড়ি, সীমান্ত চৌকিসহ নানা অবকাঠামো। এখন রোহিঙ্গাদের মংডুর যে জায়গায় পুনর্বাসনের জন্য ‘মডেল ভিলেজ’ নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে থাকতে রাজি হবে না রোহিঙ্গারা। জন্মভূমিতে পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা না পেলে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে থাকা কোনো রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরতে রাজি হবে না।
মংডু জেলা প্রশাসক বলেন, রোহিঙ্গারা মংডুর ট্রানজিট কেন্দ্রে পৌঁছার পর প্রথমে নাগরিক হিসেবে এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট) দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে এনআইডি প্রদান করা হবে। মডেল ভিলেজে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের সরকারি উদ্যোগে আড়াই কানি (এক একর) করে চাষাবাদের জমি দেওয়া হবে, রোহিঙ্গা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ দেয়া হবে, যা আগে হতো না।
সরেজমিনে দেখতে যাওয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেয়া শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) বলেন, দুই পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। সন্তুষ্টির বিষয়টা আপেক্ষিক। যে সমস্যা ৬০-৭০ বছর ধরে সমাধান হচ্ছে না, তা এক-দুই দিনে কীভাবে সম্ভব। আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই। প্রত্যাবাসন যেন টেকসই হয়, সে নিরিখে কাজ হচ্ছে।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে রাখাইন রাজ্য থেকে। রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।