চড়া মাছ-মাংসের দাম, স্বস্তি ডিম ও সবজিতে

রাজিব শর্মা »
রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বাজার তদারকিসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশাসনিক হুশিয়ারি থাকলেও কোনভাবে মানছে না ব্যবসায়ীরা।
গত সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব নিত্যপণ্যের বাজারে চড়া দরের মধ্যে রয়েছে স্থিতিতে। সরকার পণ্যের দাম কমাতে নানা ব্যবস্থা নিলেও তার সুুফল মেলেনি।
বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে যোগান ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও মাছ, গরুর মাংস, মুরগি, সালাদের সবজির দাম বেশ চড়া। আর রমজান ঘিরে চড়া হওয়া ছোলা, ডাল, খেজুরসহ প্রায় সকল পণ্যের দামে কোন পরিবর্তন আসেনি।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের চেয়ে দেশী ও সমুদ্রের মাছের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ২৫০ টাকার নিচে কোন সমুদ্রের মাছ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। যে লইট্যা মাছ এতদিন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা এখন দ্বিগুণ বেড়ে ২২০ টাকা। আর ২৫০ টাকা পোয়া এখন ৩৫০ টাকা, ৪৫০ টাকার ছোট সাইজের রুপচান্দা ৬০০ টাকা, ২৮০ টাকার মাইট্টা ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর চাষের ছোট সাইজের যে নাইলোটিকা ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা এখন ১৬০ টাকা, ১৩০ টাকার ফাঙ্গাস ১৮০ টাকা, সাইজভেদে রুই ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, বড় সাইজের কাতলা ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর পাবদা, টেংরা, মলা, কই বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৪০ টাকা। গত সপ্তাহে যে চিংড়ি ৮০০ টাকা ছিল তা এখন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ।
বকসিরহাটের মাছ ব্যবসায়ী অনিক দাশ বলেন, ‘গত সপ্তাহে একটু কমতির দিকে ছিল মাছের দাম। কিন্তু সামাজিক অনুষ্ঠান ও রমজান একসঙ্গে পড়াতেই মাছের চাহিদা বেড়েছে সে অনুযায়ী যোগান বাড়েনি। ফলে গত দুইদিন ধরে মাছের দাম বেড়েছে।’
মাছের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়া দরের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে মুরগি, গরু ও খাসির মাংস। গত সপ্তাহে যে সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা বিক্রি করছিল তা ৫০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা, ১৭০ টাকার ব্রয়লার ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকা, ৫২০ টাকা দেশী মুরগি ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরবরাহ কমার কারণে মুরগির দাম বেড়েছে বলে জানান বকসিরহাটের ব্যবসায়ী মো. হারুন।
গরু ও খাসির মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, মহিষের মাংস ৮৫০ টাক এবং খাসির মাংস কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাটের মাংস বিক্রেতারা জানান, সাগরিকা ও বিবিরহাটসহ গরুর বাজারগুলোতে গরু ও খাসি ছাগলের সংকট রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী যোগান কমের কারণে বিক্রেতারা পশু দর বাড়ানোর কারণে মাংসের দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে ইফতার ও সালাদে ব্যবহৃত শসা, বেগুন, পুদিনা ও লেবুর দাম কয়েকদিন আগে বাড়লে প্রশাসনের জোরালো অভিযানের পরও দাম কমতির কোন প্রভাব পড়েনি। বরং দুইদিনের ব্যবধানে আরও দাম বেড়েছে ।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে এতদিন যে বেগুন ও শসা বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় তা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে। আর গত সপ্তাহে যে লেবু হালি ২০ টাকা ছিল বর্তমানে প্রতি পিস লেবু ২০ টাকা করে হালিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। পুদিনা এক গুচ্ছ বিক্রি হয়েছিল ৫ থেকে ১০ টাকা তা তিনগুণ বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
বাজারে ভালো মানের টমেটো ও কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা। আর বাধাকপি, ফুলকপি, গাজর, লাউ, আলু বিক্রি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। আর পটল, ঝিঙ্গে, কচুরমুখি, ঢেড়স ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
বকসিরহাটের সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, ‘রমজানে সবজির বাজারে তেমন দাম বাড়েনি। আড়তে পর্যাপ্ত সবজি রয়েছে। বেড়েছে শুধু লেবু ও শসার দাম। আড়ত পর্যায়ে প্রশাসনের তদারকিতে এই দুটি পণ্যের দাম কমতে পারে।’
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কমেছে ডজনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা। বাজারে লাল ডিম বিক্রি হয়েছে ডজন ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। আর হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা।
ডিম ব্যবসায়ী মো. কালাম বলেন, ‘আড়তে পর্যাপ্ত ডিম রয়েছে। মাছ, মাংসের দাম বাড়াতেই ক্রেতারা ডিমের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে।’
চড়া দরের পর স্থিতিতে মুদিপণ্য
এদিকে চড়া দরের মধ্যে স্থিতিতে রয়েছে চাল, ডাল, ছোলা, খেজুর, মরিচসহ শুকনো মসলার বাজার।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। নাজির ও মিনিকেট মানের সরু চাল ৬৪ থেকে ৭৬ টাকা, মাঝারি মানের ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা ও মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কমেনি ডাল ও খেজুরের দামও। বাজারে ছোলা ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, বড় দানা তুরস্কের মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, দেশী ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, নেপালী মসুর ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, অ্যাংকর ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মানভেদে ২৮০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত খেজুর বিক্রি হয়েছে।
পেঁয়াজের দাম কমলেও চড়া আদা-রসুন
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমতির দিকে হলেও আদা-রসুনের দাম বেশ চড়া। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আমদানি পেঁয়াজ ১০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে এ পণ্যের দাম কমেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। অন্যদিকে আদা ১৮০ টাকা ও রসুন ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে ।
বকসির হাটে বাজার করতে আসা ক্রেতা মো. তৌফিক বলেন, ‘বাজারে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি মাছ, মাংস, রমজানের প্রয়োজনীয় প্রায় পণ্যের দাম বাড়তি। এদিনে পরিবারকে নিয়ে একটু ভালো খাবার কিনবো তার কোন সেই সুযোগ নেই। সবজিতেই একমাত্র ভরসা।’