বাঁশখালীর উপকূলে অরক্ষিত বেড়িবাঁধ

২৪ স্থানে ধস, ভেঙেছে সিসি ব্লক

উজ্জ্বল বিশ্বাস, বাঁশখালী »
বাঁশখালীর পুকুরিয়া থেকে ছনুয়া পর্যন্ত সাগর ও নদীর ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধের অধিকাংশ এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অরক্ষিত বেড়িবাঁধ নিয়ে উপকূলবাসীদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। আসন্ন বর্ষায় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস হলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাবার সম্ভবনা রয়েছে।
উপকূলবাসীর অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)’র সঠিক তদারকির অভাবে মাত্র ২ বছরের মাথায় ২০২৪ সালে এসে নব নির্মিত বেড়িবাঁধের ২৪ স্থানে ফাটল ও ধস দেখা দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই ভেঙে গেছে সিসি ব্লক। উপকূলবাসীর দাবি আসন্ন বর্ষার আগে বেড়িবাঁধ সংস্কার না করলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাবে। পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছেন, আগামী বর্ষার আগে বরাদ্দ পাবার সুযোগ নেই। তবে দুর্যোগ ঠেকাতে তারা সার্বক্ষণিক বাঁশখালীকে নজরে রেখেছেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বাঁশখালী উপকূলবাসীর প্রাণ রক্ষায় ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার নব নির্মিত স্থায়ী বেড়িবাঁধ জলোচ্ছ্বাস ছাড়াই ভাঙছে আর ভাঙছে। খানখানাবাদ উপকূলের কদম রসুল গ্রামে বেড়িবাঁধ জোয়ার-ভাটার স্রোতে প্রতিদিনই একটু একটু করে ভেংগে বিশালকার রূপ নিচ্ছে। একই দৃশ্য খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া, খানখানাবাদ গ্রাম, পুকুরিয়ার তেইচ্ছিপাড়া, সাধনপুরের রাতা খোর্দ, ছনুয়ার ছোট ছনুয়া। উল্লেখিত স্থানগুলোর অন্তত ২৪ স্থানে নব নির্মিত বেড়িবাঁধে সিসি ব্লকে ধ্বস দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রীতে নির্মিত সিসি ব্লকের সিমেন্ট উঠে গিয়ে সিসি ব্লক ভেঙে গেছে।
খানখানাবাদের ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম, শিক্ষক মো. ইউনুছসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে লুটপাটের কারণে অল্প সময়ে স্থায়ী বেড়িবাঁধে ফাটল ধরেছে এবং ভাঙছে।
পাউবো সূত্র জানায়, বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৫.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ২০১৫ সালের ১৯ মে একনেকে পাস হয়।
ব্যয় ধরা হয় ২৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। দফায় দফায় প্রকল্পটির সময় ও ব্যয় বেড়েছিল। সর্বশেষ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় ধরা হয়েছিল এবং ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা ছিল।
খানখানাবাদ ও ছনুয়া এলাকার মো. সায়েম খান, আব্দুর শুক্কুরসহ অনেকে বলেন, ২০১৫ সালে বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলে কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার নানা রকম কৌশল অবলম্বন করে দুর্নীতি করেছেন। বেড়িবাঁধ রক্ষায় ঢালু বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত ঘাস ও গাছ লাগানোর কথা থাকলেও তা লাগানো হয়নি। ব্লক নির্মাণে নিম্নমানে পাথর, ইট, সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করায় কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই অধিকাংশ সিসি ব্লক ভেঙে গেছে। বিস্তীর্ণ বেড়িবাঁধ জুড়ে ভাঙা সিসি ব্লক দৃশ্যমান ও নিম্নমানের বেড়িবাঁধ দৃশ্যমান হলেও পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোন নজর নেই। খানখানাবাদের কদম রসুল এলাকায় আকস্মিক ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ ও ছনুয়া এলাকায় বেড়িবাঁধে কাজ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান এন্ড ব্রাদাস। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গ্রামবাসী অভিযোগ করলেও ওই সময় তারা কোন কথা শুনেননি।
বেড়িবাঁধ নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসান এন্ড ব্রাদাসের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক রুদ্র শাহরিয়ার বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মান করে আমরা পাউবো’কে বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন ভাঙলে আমাদের করার কিছু নেই।
খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, খানখানাবাদে ভয়ংকরভাবে বেড়িবাঁধ ভাঙার খবর পাউবো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অনুপম পাল বলেন, বাঁশখালী উপকূলের বেড়িবাঁধের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে তা আগামী বর্ষার আগে পাবার সম্ভাবনা নেই।