চট্টগ্রাম শহিদ মিনার নিয়ে নাগরিক সমাজে অসন্তুষ্টি

চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মুসলিম হল ও শহিদ মিনারকেন্দ্রিক একটি কালচারাল কমপ্লেক্স বা সাংস্কৃতিকবলয় নির্মাণের। প্রায় সাত বছর পরে এই প্রকল্পের কাজ এখন একেবারে শেষের দিকে। কয়েকদিনের মধ্যে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। কিন্তু একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে এই প্রকল্পে শহিদ মিনারের অবস্থান ও নির্মাণ নিয়ে চরম হতাশ হয়েছেন নাগরিক সমাজ। এখন দাবি উঠেছে নতুন করে শহিদ মিনার নির্মাণের।
সুপ্রভাতের প্রতিনিধিকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘আসাদুজ্জামান নূর সাহেব এটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন। আমরা আশা করেছিলাম ভালো কিছু হচ্ছে। কিন্তু আমরা সেখানে দেখলাম সেটি এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে তা দেখা-ই যায় না। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। আমি তো অল্প কিছু দূর উঠে আর উঠতেই পারিনি। ষাটোর্ধ এমনকি পঞ্চাশোর্ধ মানুষেরও সেখানে উঠতে কষ্ট হবে। এমনকি শিশুরাও সেখানে উঠতে কষ্ট হবে। আমাদের যারা আর্কিটেক্ট আছেন তারা খুবই ভালো, কিন্তু এই শহিদ মিনারটি আমার মনে হয়েছে একবারে অবহেলার সৃষ্টি।’
আসলে সমস্যাটি কী তা জানাতে গিয়ে সুপ্রভাত প্রতিনিধি লিখেছেন, বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারটি মাটি থেকে ২১ ফুট উঁচুতে প্লাজার ওপরে অধিষ্ঠিত। একই স্থানে পুরোনো শহিদ মিনারটি সমতলের ওপর নির্মিত হয়েছিলো।
‘চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউট সাংস্কৃতিক বলয় প্রকল্প’টির প্রায় ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫ তলাবিশিষ্ট গ্রন্থাগার ভবন, ৮ তলাবিশিষ্ট মিলনায়তন ভবন ও একটি মাল্টিপারপাস হল এবং রাস্তার এপার-ওপারকে সংযুক্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে টানেল আকৃতির প্লাজা, যেখানে রয়েছে ওপেন এয়ার থিয়েটার ও যাদুঘর এবং প্লাজার ওপরে নির্মিত হয়েছে শহিদ মিনার। প্লাজার ওপরে শহিদ মিনার তৈরির নজির দেশের কোথাও নেই। এছাড়া শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে উঠতে হবে সিঁড়ি মাড়িয়ে। আবার সিঁড়িও ৪ ভাগে বিভক্ত। এক্ষেত্রে জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আসা মানুষের চাপ কীভাবে এই সিঁড়ি সম্বলিত পথে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে তা ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে।
আমরা জানি না পরিকল্পনাকারীরা কী করতে চাইছেন সে বিষয়ে তাঁদের পরিস্কার ধারণা ছিল কিনা এবং ডিজাইন করার সময় তাঁরা অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিলেন কিনা। আমাদের ধারণা শহিদ মিনার দোতলার মতো বেদিতে স্থাপিত হতে যাচ্ছে এবং সেখানে যেতে সংকীর্ণ সিঁড়ি অতিক্রম করতে হবে তা বুঝতে পারলে নিশ্চয়ই ভিন্ন মত পোষণ করতেন অনেকে। যাই হোক এখন যেটা হয়েছে তা যে বাস্তবতাবিবর্জিত অভিজ্ঞান থেকে করা হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের শহিদ মিনারটির যথাযথ স্থাপন এখন নগরবাসীর দাবি।