চট্টগ্রামে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের আওতায় চিকিৎসাসেবা শুরু

দেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ার শব্দটি এখনো অপরিচিত। প্যালিয়েটিভ কেয়ারের বাংলা হলো প্রশমন সেবা। মুমূর্ষু রোগীর যন্ত্রণা উপশমের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়।
নিরাময়-অযোগ্য রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা লাঘব করার একটি সমন্বিত স্বাস্থ্যব্যবস্থার নাম প্যালিয়েটিভ কেয়ার। এর মাধ্যমে রোগীর অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুকে বেদনাহীন, মর্যাদাপূর্ণ করার পাশাপাশি রোগীর পরিবারকে এই সংকট মোকাবিলায় সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হয়। এই সহায়তা দেওয়া হয় মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও আত্মিক; অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে কোনো রোগীকে যখন কিছু করা যায় না। সেই সময়ে রোগী যাতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে এবং শান্তিতে মারা যেতে পারে, সেটা হাসপাতালে কিংবা বাসায় হতে পারে। প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেটা নিশ্চিত করে।
দেশে বছরে যত ক্যান্সার রোগী পাওয়া যায় তার মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগীই নির্ণয় হয় একদম শেষ ধাপে। এই ৭০ ভাগ রোগই কিন্তু অনিরাময়যোগ্য। ক্যান্সার আমরা নিরাময় করতে পারি না, কিন্তু চিকিৎসা দেই।
কেমো কাজ না করা এবং অপারেশন করা সম্ভব নয়, এমন ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হচ্ছে মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি। অত্যাধুনিক এই পদ্ধতি বিশেষ করে লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের ক্ষেত্রে সুফল দিচ্ছে বলে চিকিৎসকরা দাবি করেছেন।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত রোববার এমনই দুজন লিভার ক্যান্সারের রোগীকে এই মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি দেয়া হয়েছে ওই হাসপাতালের রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার) বিভাগে।
সরকারি পর্যায়ে কোন হাসপাতালে এই থেরাপির প্রয়োগ এটিই প্রথম বলে চমেক হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। সরকারি পর্যায়ে দেশের কোন হাসপাতালে এই থেরাপির প্রয়োগ এখনো চালু হয়নি। বেসরকারি পর্যায়েও রাজধানী ঢাকায় হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে এই থেরাপি চালু আছে। সে হিসেবে সরকারি পর্যায়ে সারাদেশে একমাত্র চমেক হাসপাতালেই প্রথমবারের মতো এই মাইক্রো ওয়েভ অ্যাবলেশন থেরাপি প্রয়োগ করা হল।
এই থেরাপির মাধ্যমে লিভার, কিডনি ও ফুসফুসে থাকা টিউমার বা ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া কোষ শনাক্ত করে তা পুড়িয়ে দিয়ে ধ্বংস করা হয়ে থাকে। সিটি সিমুলেটর নামে ক্যান্সারের অত্যাধুনিক একটি মেশিনের মাধ্যমে এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। মেশিনটির দাম ৮ কোটি টাকার কম নয়। ঢাকার বাইরে চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগে এই সিটি সিমুলেটর মেশিন সচল রয়েছে।
প্যালিয়েটিভ ট্রিটমেন্টের আওতায় জটিল রোগীদের এই থেরাপি দেয়া হয়ে থাকে। যেসব রোগীদের আর তেমন কোন আশা নেই, এমন রোগীদের এই থেরাপি দেয়া হয়। এই থেরাপি ক্যান্সার দূর করে রোগীকে সুস্থ করে, এমন দাবি করা যায় না। তবে থেরাপির পর ওই ক্যান্সার রোগী আরো কিছু দিন মোটামুটি কোয়ালিটি লাইফ লিড করতে পারেন বলা যায়। সরকারি পর্যায়ে এই থেরাপির খরচও অনেক কম।