গাজার অর্ধেক মানুষ বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে অধিকৃত গাজার প্রায় অর্ধেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে। যেখানে মোট জনসংখ্যার পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ। গতকাল বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

জাতিসংঘের সর্বশেষ মানবিক তথ্য অনুসারে, এর মধ্যে প্রায় তিন লাখ ৫২ হাজার মানুষ মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ দ্বারা পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় চাচ্ছে।

সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ইউএনডব্লিউআরএ পরিচালিত স্কুলের অবস্থাকে ‘ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মধ্য গাজার আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে এমন একটি ভয়াবহ স্কুল রয়েছে। সেখানে প্রায় চার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষকে অভ্যন্তরীণভাবে (আইডিপি) আশ্রয় দিয়েছে সংস্থাটি। এখানেও ইসরায়েল বিমান হামলা করেছে। গত সোমবার বিকেলে ওই বোমা হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর বাংলাট্রিবিউনের।

৭ অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের আজ ১২তম দিন। এই সংঘাতে অন্তত তিন হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৯৪০ শিশু এবং ১ হাজার ৩২ নারী আছেন। অপরদিকে হামাসের হামলায় অন্তত এক হাজার ৪০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।
আজকের মধ্যে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ

ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর কাজ আজ শুক্রবার থেকে শুরু হতে পারে বলে আশার বাণী শুনিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত বুধবার ইসরায়েল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে সাংবাদিকদের এ কথা বলে তিনি।

এও জানান, ত্রাণ সহায়তা সরবরাহের জন্য নিজেদের ও গাজা সীমান্তের রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে রাজি হয়েছে মিশর।

হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধে বন্ধু ‘রাষ্ট্রকে’ সংহতি জানাতে জেরুজালেম সফর করেন বাইডেন। সফর শেষ করে মার্কিন বিমান বাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। খবর বাংলানিউজের।

বাইডেন জানান, তিনি টেলিফোনে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি গাজার বেসামরিক লোকজনের জন্য ত্রাণ সরবরাহের জন্য রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে রাজি। তা ছাড়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আশা করছি শুক্রবারের মধ্যেই রাফাহ ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সামগ্রীবাহী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করবে। প্রথম দিন ২০টি ট্রাককে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। তবে এই ক্রসিং খোলা হবে কেবল ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের জন্য। শরণার্থীরা এই ক্রসিং ব্যবহার করতে পারবেন না।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস। জবাবে গাজা ভূখ-ে বিমান ও বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে মুখ থুবড়ে পড়ে গাজা। ব্যাপক ধ্বংসের কারণে মানবিক বিপর্যয়ে পড়ে উপত্যকার জনগণ। এই অবস্থায় বন্ধ করে দেওয়া হয় রাফাহ ক্রসিং। যে কারণে গাজা ভূখ-ে ত্রাণ-সহায়তা আসা বন্ধ হয়ে যায়। মিসর সীমান্তে অন্তত ২০০ ট্রাক ত্রাণবাহী অপেক্ষা করে আছে।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতির জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে এই খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল ব্রাজিল। গতকাল বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৫ সদস্যের মধ্যে ১২ সদস্যই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে একমাত্র ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য এই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।

জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড ভোটের পর পরিষদকে বলেন, ‘আমরা কূটনৈতিকভাবে অনেক কাজ করি। আমাদেরকে আমাদের মতো কাজ করতে দেওয়া উচিত।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে রাশিয়ার আনা একটি খসড়া প্রস্তাবও সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হত্যা এড়ানোর জন্য ইসরায়েলকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছে দেশটি। তবে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং পানি, খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ করে অবরোধ আরোপের কোনও সমালোচনা করেনি মার্কিন প্রশাসন। খবর বাংলাট্রিবিউনের।

৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের গতকাল ১২তম দিনে এই সংঘাতে অন্তত তিন হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৯৪০ শিশু এবং ১ হাজার ৩২ নারী আছেন। অন্তত ১২ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

অপরদিকে হামাসের হামলায় অন্তত এক হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। চার হাজার ৪০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।