খাবার পানির তীব্র সংকট

নিজস্ব প্রতিনিধি, নাইক্ষ্যংছড়ি »

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে পানি সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। খাবার পানির জন্য হাহাকার করছে মানুষ। উপজেলার বহু নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে। গরমে পানির ভূগর্ভস্থ স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক পুকুর, লেক ও ছড়ায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে না।

মানুষের এমন দুর্ভোগের জন্য জনস্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত তদারকির অভাব, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার পাহাড়ি জনপদের সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ঘুমধুমের ফাত্রাঝিরি সদর ইউনিয়নের চাকডালা, উপজেলা সদর,বাগান ঘোনা, সহ, সোনাইছড়ি ও দোছড়ি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায় প্রচ- গরমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ চার ইউনিয়নে অন্তত দেড় থেকে দুই শতাধিক রিংওয়েল, নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে ঘরে ঘরে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।

ঘুুমধুম ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজ উদ্দিন বলেন,পানির অভাবে গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় অবস্থান করছি। আমার আশপাশের খাল নালা পুকুর রিং ওয়েল সব শুকিয়ে গেছে। নানা উন্নয়ন হলেও এখানো পানির সমস্যা প্রকট।

অনুসন্ধানে জানা জায় অনেকে লেক, পুকুর ও ছড়ার ময়লাযুক্ত পানি খেয়ে টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, তার ইউনিয়নে পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা নিরসনে তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

দোছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল আমিন জানান, তাদের বাড়ির একটি রিংওয়েল ছাড়াও বাড়ির আশপাশের আরও কয়েকটি নলকূপ থেকে পানি কম উঠছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

একিইভাবে উপজেলার সদর সোনাইছড়ি, দোছড়ি ইউনিয়সহ ঘুমধুমের বিভিন্ন গ্রামে বাইশফাড়ী, বরইতলীসহ অর্ধশত গ্রামে খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে।
এসব গ্রামে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এ্যনিং মার্মা জানান, তার ইউনিয়নে উপজাতীয় পল্লীর অর্ধশতাধিক রিংওয়েল/ টিউবওয়েল অচল হওয়ায় নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রচ- গরমে পাহাড়ি ছড়া, ঝিরির পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে।

পানির অভাবে শত শত কৃষকের চাষাবাদও ব্যাহত হয়েছে। ঠিকভাবে ফসলও হয়নি এ বছর। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক মো. শফিউল্লাহ জানান, প্রচ- গরমে শুষ্ক মৌসুমের তিন মাস এসব পাহাড়ি এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় পার্বত্য মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বান্দরবান জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছি।

তিনি পর্যায়ক্রমে এসব এলাকায় পানির চাহিদা পূরণের আশ্বাস দেন। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহ মো. আজিজ জানান, প্রচণ্ড গরমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপ/ রিংওয়েলগুলোতে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। কিছু স্থানে ১৫০ ফুট নিচে গিয়েও নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

দৌছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইমরান বলেন, তার ইউনিয়নে ঝিরি-ছড়ার পানির উৎস বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তীব্র তাপদাহে বন্যপ্রাণীরা পানির উৎসের খোঁজে ঝিরি-ছড়ায় নেমে এসেছে। ফলে পানির শেষ উৎস গুলো এখন দূষিত হয়ে পড়েছে। দূষিত পানি পান করে এলাকার মানুষ অসুস্থ হছে। তিনি এ বিষয়ে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন, বন উজাড়, পাহাড় কাটা, ঝিরিতে বাঁধ দেয়াসহ যে সকল মানবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে সে সবের বিরূদ্ধে প্রশাসন সব সময়ই অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে শুধু অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসনের পক্ষে পরিবেশ বাঁচানো প্রায় অসম্ভব।
নিজেদের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষা ও পানির সংকট দূর করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।