কাঠগড়ায় ওসি প্রদীপের ‘ফোনালাপ’, তিন পুলিশ প্রত্যাহার

তদন্ত কমিটি গঠন

সুপ্রভাত ডেস্ক »
সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের সময় কাঠগড়ায় থাকা অবস্থায় মামলার আসামি সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মোবাইল ফোনে কথা বলার ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করার কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
বুধবার দুপুরে বিডিনিউজকে তিনি বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার কারণে আদালত পুলিশের তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এরা হলেন এটিএসআই মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, কনস্টেবল আব্দুল কাদের ও আব্দুস সালাম।
তিনি বলেন, আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় কাঠগড়ায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপের মোবাইল ফোনে কথা বলার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার বিষয়টি বিচারকের নজরে আসে।
‘সোমবার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণকালে যে কোনো সময় ওসি প্রদীপ মোবাইল ফোনে কথা বলে থাকতে পারেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকা কেউ একজন মোবাইল ফোনে ছবিটি ধারণ করেছেন। তবে ছবিটি সঠিক কিনা তা এখনো যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়নি।
বিষয়টি জানার পর আদালতে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) রাতেই আদালত পুলিশের ৩ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।’
হাসানুজ্জামান জানান, এ ঘটনা তদন্তে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, আদালতের কাঠগড়ায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মোবাইল ফোনে কথার বিষয়টি মঙ্গলবার বিচারকের নজরে আসে। পরে এ বিষয়ে ওসি প্রদীপকে সতর্ক করেন বিচারক। এছাড়া বাদি ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
সিফাত বললেন মেজর সিনহা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। টানা তিন দিন মামলার বাদি শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ও শাহেদুল ইসলাম সিফাত সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গতকাল বুধবার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজার জজ ও দায়রা আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
তিনি বলেন, ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট তিন দিন সাক্ষ্যগ্রহণের পর মামলার বাদি মেজর (অব.) সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ২ নম্বর সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
আদালত থেকে বেরিয়ে মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাত সাংবাদিকদের বলেন, মেজর (অব.) সিনহা পরিকল্পিত হত্যাকাÐের শিকার হয়েছেন। আশা করি আদালত ন্যায়বিচার করবেন।
শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, মামলার বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। মামলার কাজ দ্রæত শেষ হবে কিনা এটি সাক্ষীদের ওপর নির্ভর করবে। এ মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তবে সুন্দর প্রক্রিয়ায় বিচার কার্যক্রম চলছে। আমরা আশাবাদী, ন্যায়বিচার পাবো।
আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, মামলার এজাহার এবং জবানবন্দিতে সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের বক্তব্যে গরমিল রয়েছে। এজাহারের নানা অসঙ্গতি আদালতে উপস্থাপন করেছি।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় টেকনাফ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে। আদালত থেকে র‌্যাব-১৫-কে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়।
এরপর সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এবং প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাত জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গত ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।
এ হত্যাকাÐের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ আলোচিত মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন র‌্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।