কবরে কলেমা

অসিত কুমার মন্ডল »

নিয়াজ নামের এক যুবক রিশিতা নামের এক মেয়েকে খুব ভালবাসত। নিয়াজ যখন অনার্স প্রথম বর্ষে রিশিতা তখন ক্লাস নাইনের ছাত্রী। ঈদের সময় নিয়াজ গিয়েছিল তার খালার বাড়ি বেড়াতে। রিশিতাও এসেছিল তার খালার বাড়ি দাওয়াতে। রিশিতারা ছিল নিয়াজের খালাদের নিকটতম প্রতিবেশী। তাই খাবার টেবিলে বসে দুজনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে রিশিতা নিয়াজকে মনে মনে ভালবেসে ফেলে। নিয়াজও রিশিতাকে। কিন্তু সে ভালবাসা একে অপরের মনে মনে রয়ে যায়।
রিশিতা মাঝে মাঝে নিয়াজের খালাদের বাড়িতে আসত। খালার ছিল একটি মাত্র মেয়ে। ও পড়ত পঞ্চম শ্রেণিতে। নাম ছিল রিকি। রিকির সাথে রিশিতা প্রায়ই চলাফেরা করত। কারণ পাড়াতে রিশিতার সমবয়সী আর কোনো মেয়ে না থাকায় রিকির সাথে ও বান্ধবীর মত মেলামেশা করত। আর তার খালাত ভাই নিয়াজের খোঁজখবর নিত। একদিন রিশিতা রিকিকে বলল, তোমার নিয়াজ ভাইয়ার মোবাইল নম্বরটা কি তুমি জানো?
রিকি বলল, জানি। কিন্তু তুমি ভাইয়ার নম্বর নিয়ে কি করবে? ভাইয়া তো কলেজে পড়ে।
রিশিতা বলল, আমার ভীষণ দরকার বোন। প্লিজ, নম্বরটা একটু দাও না।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বলছি। তুমি লিখে নাও।
রিকির কাছ থেকে নম্বর নিয়ে হাতে লিখে রাখল। তারপর বাড়িতে গিয়ে তার ডায়েরির এক কোণে লিখে রাখল। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হলে নিয়াজের নম্বরে কল দেবে বলে মনে মনে ঠিক করল।
ইতিমধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলো। চৌদ্দ দিন পর পরীক্ষা শেষ হলো। পরীক্ষা শেষ হলে তারপরের দিন রিশিতা নিয়াজের নম্বরে কল দিল। নিয়াজ ও প্রান্ত থেকে কল রিসিভ করে বলল কে?
রিশিতা বলল, কেন চিনতে পারছেন না? তিন মাসের ব্যবধানে সব ভুলে গেলেন?
নিয়াজ কিছু বুঝতে পারছে না। সে বলল, আপনার নাম-ঠিকানা, পরিচয় বলুন।
রিশিতা বলল, আমি রিশিতা। ঈদের দিন তো আপনার খালার বাড়িতে এক টেবিলে বসে দাওয়াত খেলাম।
হ্যাঁ-হ্যাঁ মনে পড়েছে। তুমি কেমন আছ?
রিশিতা বলল, আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
ভালো। কিন্তু হঠাৎ কি মনে করে কল করলে?
কি মনে করে কল করতে পারি? ধরুন. আপনার কথা আমার মনে পড়ছে। আপনাকে দেখতে ইচ্ছা করছে। আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে, তাই।
নিয়াজ বলল, কিন্তু কেন আমার প্রতি এই ইচ্ছাগুলো হচ্ছে?
এতটুকু কি আপনি বোঝেন না? আপনি তো আমার চেয়ে বড় ক্লাসে পড়েন, কলেজে পড়েন।
আহা! আমি তো জিন নই যে, সবার মনের খবর জেনে বসে আছি।
এটুকু যদি না বোঝেন, তাহলে আমি বলি শুনুন। আমি আপনাকে ভালোবাসি। হলো তো?
রিশিতার কথায় নিয়াজ বলল, আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি। খাওয়ার টেবিলে তোমাকে দেখার পর থেকে তোমার কথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে। কিন্তু তোমার সাথে যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ পাইনি।
সুযোগটা না হয় আমিই করে দিলাম। এখন থেকে যত খুশি আমার সাথে কথা বলবেন, যোগাযোগ রাখবেন। কিন্তু আমি আপনাকে মিস কল না দেওয়া পর্যন্ত আপনি সরাসরি কখনো কল দেবেন না। কারণ ভাইয়ার মোবাইল তো। ঠিক আছে। ভাল থাকেন, আজ আর নয়। পরে কথা হবে। রিশিতা কল বিচ্ছিন্ন করল। কারণ ওর ভাইয়া মাছ ধরতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসেছে। এ জন্যে ভাইয়া যেন জানতে না পারে। তাই রিশিতা ডায়াল নম্বরটি ডিলেট করে দিল।
এভাবে প্রায় দেড় বছর ধ’রে রিশিতা আর নিয়াজের মধ্যে মনের ভাব আদানপ্রদান চলতে থাকে। এরই মধ্যে রিশিতা এসএসসি পাস করে গেল এ-প্লাস পেয়ে। নিয়াজ জানত না যে রিশিতা এতো ভালো ছাত্রী। পরীক্ষায় এতো ভালো রেজাল্ট করবে। রেজাল্টের খবর পাবার পরে নিয়াজ বলল, তুমি সত্যিই আমার মনের রানি হওয়ার যোগ্য। এবার তোমাকে আমি একটি মোবাইল সেট উপহার দেব। আর শোন, ভালো রেজাল্ট যখন হয়েছে, তখন বিএল কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হও। তাহলে দু’জনের যোগাযোগটাও ভালো হবে। তোমার সমস্যাগুলোও আমি দেখতে পারব।
ইতিমধ্যে নিয়াজের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা কমপ্লিট। রেজাল্টের অপেক্ষায়। রেজাল্ট বের হলে মাস্টার্স প্রিভিয়াসে ভর্তি হবে। রিয়াজের বুদ্ধি মতো রিশিতা ইন্টারমিডিয়েট বিএল কলেজে ভর্তি হলো। তারপর থেকে নিয়াজের সাথে এখন তার প্রায়ই যোগাযোগ হয়। নিয়াজ তাকে একটি মোবাইল ফোনও কিনে দিয়েছে। ইচ্ছা করলে দু’জন এক সাথে ঘুরতে পারে। এভাবে আরো দুবছর কেটে গেল। রিশিতার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। ওদিকে নিয়াজের মাস্টার্সও কমপ্লিট। পরীক্ষার পরে নিয়াজ ও রিশিতা এক সাথে গ্রামের বাড়ি চলে গেল। কারণ রেজাল্ট বেরুতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে।
গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পর নিয়াজ আর রিশিতার মধ্যে মোবাইলে প্রায়ই কথা হতো, এসব কথা রিশিতার মা গোপনে গোপনে শুনত। একদিন রিশিতার বাবার সাথে মেয়ের এসব কথাবার্তার কথা তার মা বলল। যে, মেয়েকে এখন পাত্রস্থ করাই উচিত। তারপর জামাইয়ের বাড়ি গিয়ে না হয় লেখাপড়া করবে। রিশিতার বাবা এ কথা শোনার পর তার মাকে বলল, তুমি আরো আগে থেকে আমাকে বললে মেয়েকে আর কলেজে ভর্তি করতাম না। বিয়ে দিয়ে দিতাম। শুধু তোমার অনুরোধে ওকে কলেজে ভর্তি করেছিলাম।
ইতিমধ্যে বাড়িতে ঘটক চলে এলো রিশিতাকে দেখার জন্যে। ছেলে একটি বেসরকারি কলেজে চাকরি করে। মেয়ে দেখে ঘটকের পছন্দ হয়ে গেল। ঘটক ফিরে গিয়ে ছেলের বাপের সাথে পছন্দের মেয়েটির কথা বলল। তখন ছেলের বাবা ঘটকের সাথে আরো দুজন লোক এবং ছেলেকে পাঠালেন মেয়ে দেখতে। ওদিকে রিশিতা এ সকল খবর নিয়াজকে জানাল। যে, তার বিয়ের জন্য বাড়িতে ঘটক এসেছে। বাবা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে দেখছে। মেয়ে দেখে ছেলের পছন্দ হলো বটে। কিন্তু রিশিতা কয়েক নজর ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখল যে, সে অত্যন্ত কালো এবং কুশ্রী। তার চেহারা মোটেই ভালো নয়। নিয়াজ আর সে আকাশপাতাল ব্যবধান। শুধু চাকরিটাই তার মুখ্য।
রিশিতার বাবা রোকন হায়দার। মেয়ের বিয়ের জন্য মতামত দিলেন ঘটকের কাছে। বিয়ের দিন-তারিখ ধার্য করার জন্য ছেলের বাবাকে আসার কথা বললেন। রিশিতা মহাবিপদে পড়ে গেল। সে নিয়াজকে ছাড়া জীবনে আর কাউকে ভাবতে পারে না। এদিকে যদি এ বিয়েতে মত না দেওয়া হয় তাহলে সামাজিকভাবে বাপের মানসম্মান ক্ষুণ্ন হয়। রিশিতা উভয় সংকটে পড়ল। ওদিকে নিয়াজ সবেমাত্র মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। চাকরি না পেলে সে বিয়ে করে খাওয়াবে-পরাবে কি করে?
রিশিতা তার মা-বাবাকে বলল, আমি এখন বিয়ে করব না। আগে অনার্সটা শেষ করি। তাছাড়া আমার তো একটা পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার আছে। সেটা কেন গুরুত্ব দিচ্ছ না? রোকন সাহেব মেয়ের কোনো কথাই শুনলেন না। তাকে বিয়ে দেয়ার সকল কাজ পাকাপাকি করে ফেললেন।
রিশিতার বিয়ের সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। এ খবর রিশিতা নিয়াজকে মোবাইলে জানালে নিয়াজের বুকে যেন শেলের আঘাত পড়ল। কি করবে ভেবে পায় না। এই মুহূর্তে রিশিতাকে বিয়ে করারও সুযোগ নেই। রিশিতাকে এই মুহূর্তে বিয়ে করলে সেটা হবে জোরের শর্তে বিয়ে করা। এবং রিশিতার বাবাও তা সহজে মেনে নেবেন না। হয়ত মামলা-মকদ্দমা করবেন। তাতে দুই পক্ষের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে।
নিয়াজ রিশিতাকে যখন কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারল না, রিশিতা নিয়াজকে বলল, হয়তো এ জীবনে আমার সাথে আপনার মিলন হবে না। মৃত্যুর পরে আমরা আবার এক সাথে মিলব বলে ফোন কেটে দিল।
বিয়ের দিন আগত। বাড়িতে বর এসেছে। চারিদিকে ভীষণ ধুমধাম। কিন্তু রিশিতার মনে কোনো আনন্দ নেই। বিয়ের ঠিক এক ঘণ্টা আগে সে অনেকগুলো ঘুমের বড়ি এক সাথে খেয়ে ফেলল। যা ছিল মাত্রাতিরিক্ত। যা খেলে আর কখনো জ্ঞান ফেরে না। ঘুমের ওষুধ খেয়ে রিশিতা তার বেডে চিরনিদ্রায় ঢলে পড়ল। এদিকে বিয়ের পিঁড়িতে বর-কনেকে সাজিয়ে আনার জন্য বরপক্ষের লোকেরা কন্যাপক্ষকে বারবার বলতে লাগল। কিন্তু রিশিতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে তার শোবার ঘরে বেডে সবাই ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেল। কিন্তু তার দেহ নিষ্প্রাণ। নিশিতা ঘুমের বড়ি খেয়ে মারা গেছে। চারিদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়ল।
ওদিকে বিয়ের দিন বিকেলে নিয়াজ তার খালার বাড়ি এসেছিল। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে সে যায়নি। খালারা সবাই বিয়ে বাড়ি গেলে একাকী নিয়াজ খালার বাড়ির উঠান দিয়ে পায়চারী করছে। ঠিক তখন বিয়ে বাড়িতে আসা রিশিতার এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিয়াজকে ফোন করে জানাল যে, রিশিতা ঘুমের বড়ি খেয়ে মারা গেছে।
এ খবর শোনার সাথে সাথে নিয়াজের পায়ের নিচ থেকে মাটি যেন সরে যেতে লাগল। সে ভাবল, তার বেঁচে থেকে লাভ কী? তার জন্য যদি রিশিতা মরে যেতে পারে, সে কেন পারবে না? মৃত্যুর আগে নিয়াজ একটি ছোট্ট চিঠি লিখল : ‘রিশিতা যখন আমার জন্য এ পৃথিবী থেকে চলে গেল। তখন আমার আর বেঁচে থেকে লাভ কি, খালা। আমার মৃত্যুর জন্য তোমরা কেউ দায়ী নও। ইতি নিয়াজ।’
চিঠি লেখার পরপরই নিয়াজ তার খালাদের উঠানে ধানের গোলার নিচে রাখা ধানে ছিটানো কীটনাশক ঢকঢক করে কয়েক ঢোক গিলে তার লেখা চিঠিটি মাথার নিচে রেখে পুকুরের ঘাটে সিঁড়ির উপরে চিরঘুমে শুয়ে পড়ল।
এদিকে বিয়ে বাড়ির ঐ দুর্ঘটনায় সবাই ব্যস্ত। বরপক্ষের লোকেরা তাদের বর নিয়ে ফিরে গেল। চারদিকে একটি হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হলো। বিয়ে বাড়ির আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হলো। আত্মীয়স্বজন সবাই একে একে ফিরে যেতে লাগলো। নিয়াজের খালা ও খালাত বোন রিকিও বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে পুকুরের ঘাটে গেল। নিয়াজকে শোয়া দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করতে লাগল। কিন্তু দেখল নিয়াজের কোনো নচাচড়া নেই। নিশ্বাস-প্রশ্বাস নেই।
রিকি জানত। রিশিতা আপুকে নিয়াজ ভাইয়া খুব ভালবাসত। রিশিতা আপু চলে গেছে বলে ভাইয়া তুমি একি করলে বলে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠল! সাথে রিকির মাও! দু’জনের কান্না শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এলো। খবর পেয়ে রিকির ভাই রিয়াজ ও বাবা নোমান সাহেব চলে এলো। সবার কান্নার সুরে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠতে লাগল। সবাই হা-হুতাশ করতে লাগল। কেউ কেউ বলতে লাগল, এর সব দোষ রোকন হায়দারের। তিনি মেয়ের মতামতের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। যার কারণে আজকে দুটো ছেলেমেয়ের জীবন হারিয়ে গেল একই সময়ে।
সকাল হলে দারোগা-পুলিশ এলো। বিস্তারিত ঘটনা জানতে চাইল সবার কাছে। দারোগা নিয়াজের লাশটিকে ঘাটের সিঁড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির উঠানে নিতে বললেন। নিয়াজের লাশ নামানোর সময় মাথার নিচে একটি সাদা কাগজ দেখে দারোগা কাগজটি পড়ে নিয়ে সবাইকে বললেন। বিয়ে বাড়িতে পরপর দু’জন আত্মহত্যা করেছে। এটি তো আপনাদের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে হয়েছে। যেহেতু পরিণত বয়সের ছেলেমেয়ে। তাদের মতামত না জেনে এ ধরনের বিয়ের আয়োজন করা ঠিক হয়নি। দারোগা-পুলিশ রিশিতার লাশও দেখল। তারপর চলে গেল। নিয়াজের বাবা-মা এসে তাদের একটি মাত্র ছেলের জন্য খুব আহাজারি করতে লাগল!
সবাই সিদ্ধান্ত করল, ওরা যখন একে অপরকে ভালবেসে উভয়ে এক সাথে মারা গেছে, তখন ওদের দুজনকে এক জায়গায় পাশাপাশি কবর দেয়া হোক। সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়াজ ও রিশিতাকে কবরখানায় নিয়ে পাশাপাশি কবর দেয়া হলো।
ওদের দুজনকে যেখানে কবর দেয়া হলো, তার পাশে ছিল একজন আলেমের কবর। মৃত্যুর আগে আলেম খুব ভালো মানুষ হিষেবে পরিচিত ছিলেন। বেঁচে থাকাকালে তিনি কোনো গুনাহর কাজ করেননি। জীবনে তিনি সব নেক কাজ করেছেন।
মৃত্যুর পর নিয়াজ আর রিশিতা দুজনের আত্মা কবরের মধ্যে পাশাপাশি বসে কথা বলে। প্রতিদিন পাশের কবর থেকে আলেম সাহেব তা শুনেন। ওদের জীবনের সব সাধ অপূর্ণ রয়ে গেছে। জীবন্ত অবস্থায় ওদের দুজনের সাথে কোনো মিলন হলো না। জীবনে বেঁচে থাকতে ওরা একটু কলেমা পড়তে পারল না। মৃত্যুর পরও যদি এই কবরে একটু কলেমা পড়তে পারত, তাহলে ওদের জীবনের সাধপূর্ণ হতো। দুজনের আত্মা এক আত্মায় মিলে শান্তি পেতো। কিন্তু কবরের মধ্যে তাদেরকে কলেমা পড়াবে কে? কলেমা পড়তে গেলে যে মৌলবী বা আলেম লাগে।
ওদের দুজনের কথা শুনে, পাশের কবর থেকে আলেম বললেন, তোমরা চিন্তা করো না, আমি তোমাদের পাশের কবরে আছি। আমি জানি, তোমরা একে অপরকে ভালোবেসে মৃত্যুবরণ করেছ। তোমাদের ভালবাসা পবিত্র। তোমাদের জীবনের সব সাধ অপূর্ণ রয়ে গেছে। তোমাদের কলেমা না পড়ানো পর্যন্ত দুজনের আত্মা এক সাথে মিলতে পারছে না।
ওরা দুজন বলল, আপনি আলেম? আপনি কবে আমাদের কলেমা পড়াতে পারবেন? আলেম বললেন, আগামী দিন সন্ধ্যায় শুভ সময়। ঐ সময় আমি তোমাদের কলেমা পড়াব। কারণ ঐ সময় তোমরা দুজন মারা গিয়েছিলে।
পরের দিন সন্ধ্যায় আলেম পাশের কবর থেকে নিয়াজ আর রিশিতা দুজনকে কলেমা পড়ালে ওদের দুজনের আত্মা এক আত্মায় মিলিত হয়ে বেহেশতে চলে গেল। আর পাশাপাশি কবরে শুয়ে থাকল দুটি দেহ।