এক কেজি রেণু ২ লাখ টাকা !

হালদায় আরেক দফা ডিম ছাড়তে পারে মা-মাছ

মোহাম্মদ নাজিম, হাটহাজারী »

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে আহরিত ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার আশানুরূপ ডিম সংগৃহীত না হলেও চাহিদা বেশি থাকায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে সর্বোচ্চ দাম ১ লাখ ৯০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি রেণু বিক্রি হচ্ছে। গত বছর কেজিপ্রতি দাম ছিল ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। হালদা থেকে আহরিত ডিমের পরিমাণ কম হওয়ায় জন্য হতাশা থাকলেও রেণুর চড়া দাম পেয়ে খুশি ডিম সংগ্রহকারীরা।

এ বছর বজ্রসহ ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের প্রকোপ ছাড়াই পরপর ২ দফায় নমুনা এবং স্বাভাবিক ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে এবার আশানুরূপ ডিম ছাড়েনি মা মাছ। সব মিলিয়ে এবার নদী থেকে আহরিত ডিমের পরিমাণ ছিল মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কেজি, যা থেকে রেণু উৎপন্ন হয়েছে ১০৫ কেজি। এই কম পরিমাণ ডিমের জন্য আহরণকারীরা যেমনটি হতাশ হয়েছে, তেমনি হালদা সংশ্লিষ্টরাও নিরাশ। এখন সর্বশেষ ভরসা আগামী অমাবস্যা জো/ তিথি।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, গেল পূর্ণিমায় মা মাছ আশানুরূপ ডিম না ছাড়লেও আগামী অমাবস্যার উপর ভরসা করে বুক বেঁধে আছেন ডিম আহরণকারীরা। অমাবস্যার সময়ে অর্থাৎ চলিত মাসের ২৫ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত মা মাছ ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম। তারা বলেন, চলতি মাসের শেষ দিকে অমাবস্যার জো’তে ডিম ছাড়তে পারে মা-মাছ। তাদেও পেটে থাকা ডিম বহু আগেই পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। তাই পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও বজ্রপাতের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তোড় সৃষ্টি হলেই অমাবস্যার জো ছাড়াও মা-মাছ ডিম ছেড়ে দিতে পারে।

হাটহাজারী উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর বলেন, হালদা নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের ৪টি সরকারি হ্যাচারিতে ১৩০টি ট্যাঙ্কে ডিম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। পাশাপাশি কোনো কোনো ডিম সংগ্রহকারী তাদের ব্যক্তিগত খরচে তৈরিকৃত মাটির কুয়ায় (সনাতন পদ্ধতি) রেণু পরিস্ফুটনের কাজ করছেন। তবে হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ কম হওয়ায় রেণু পরিস্ফুটন কাজে হালদা পাড়ে ডিম ফোটানোর তেমন উৎসব নেই। এদিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফের (ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন) নিজস্ব হ্যাচারিতেও (চারকোণা ট্যাঙ্ক ১০টি, গোলাকার ট্যাঙ্ক ৫টি ও মাটির কুয়া ৮টি) একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়। সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যাচারিতে যাতে সঠিকভাবে রেণু উৎপাদন ও বিক্রয় করতে পারেন এবং গ্রাহকরা যাতে হালদার বিশুদ্ধ রেণু ক্রয় করতে পারেন। আইডিএফ’র প্রকল্প ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপক জানান, হ্যাচারিতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, পানি, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও ডিম সংগ্রহকারীদের পরিচর্যায় উৎপাদিত হচ্ছে হালদার শতভাগ বিশুদ্ধ রেণু।

অনেকেই অভিযোগ করেছেন ডিম দেয়ার পর কার্প জাতীয় মা-মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় শিকারিরা মা-মাছ ধরতে ফাঁদ পাতে। অন্যদিকে কেউ কেউ হালদা পাড়ে কৃত্রিম রেণু পোনা তৈরি করে বিক্রিরও অভিযোগ করেছেন।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম সুপ্রভাতকে বলেন, কৃত্রিম রেণু পোনা তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ উপজেলা প্রশাসন ও হালদা পাড়ে সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে গ্রাম পুলিশের সমন্বয়ে পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীর বিভিন্ন স্থানে শিকারিরা মা-মাছ ধরতে ফাঁদ পাতে। তাই, মৎস্য শিকারিরা যাতে মা-মাছ শিকার করতে না পারে, সেজন্য কঠোর নজরদারিতে রয়েছে প্রশাসন।