ইমাম হোসাইন (রা) হক প্রতিষ্ঠায় শাহাদাতের সুধা পান করেন

শাহাদাতে কারবালা মাহফিলে বক্তারা

জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে শাহাদাতে কারবালা মাহফিলে গতকাল গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানীর (রহ) বংশধর শাহসূফি সৈয়দ আফিফ উদ্দিন আল মনসুর আল জিলানি আল বাগদাদি বলেন, দুনিয়াজুড়ে আজ আহলে বায়তে রাসুলের (দ) চর্চা হচ্ছে। ইমাম হোসাইন (রা) কারবালা প্রান্তরে হক ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে শাহদাতের সুধা পান করেন।

মাহফিলে আলোচকরা বলেন, চট্টগ্রাম দেশের নৈতিকতাধর্মী সাংস্কৃতিক চর্চার পাদপীঠ। মাইজভা-ারী, সিরিকোটি ও দরবারে ইছাপুরীসহ অন্যান্য সুন্নি দরবারের মহাত্মা মনীষীগণ এখানে ইসলামী সংস্কৃতির যে মশাল প্রজ্বলিত করে গেছেন, তাতে ঈমান আক্বিদা সুরক্ষার দিশা পাচ্ছেন সর্বস্তরের মুমিন মুসলমানরা। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে জশনে জুলুস, আউলিয়ায়ে কেরাম (রহ) স্মরণে ওরস মাহফিল এবং মহররম মাসে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল ও হিজরি নববর্ষ পালনের কারণে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঔজ্জ্বল্যই দিন দিন বিকশিত হচ্ছে।

শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের মাধ্যমে ইসলাম তথা সুন্নিয়তের সংস্কৃতিকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়ার বাস্তব রূপকার হলেন জমিয়তুল ফালাহর প্রথম খতিব খতিবে বাঙাল অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরী (রহ)। আর শুরু থেকেই এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছেন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব সুফি আলহাজ¦ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এই দুই কৃতীজনের কীর্তিগাথা যুগ যুগ ধরে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আর জমিয়তুল ফালাহ সুন্নিয়তচর্চার পাদপীঠ হিসেবে চাটগাঁবাসীর হৃদয়াসনে চিরকাল টিকে থাকবে।

গতকালের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন চউক এর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালাম। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজনীতিবিদ মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জমিয়তুল ফালাহর কারবালা মাহফিল চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক উজ্জ্বলতার প্রতীক। এই মাহফিল অনন্তকাল ধরে ইনশাআল্লাহ টিকে থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে আবদুচ ছালাম বলেন, জমিয়তুল ফালাহর কারবালা মাহফিল আমাদের ঈমানি চেতনাকেই শাণিত করছে। এ মাহফিল চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে উজ্জ্বলতর করেছে।

সুফি মিজানুর রহমান বলেন, করোনার কারণে দুই বছর আমরা এই মাহফিল করতে পারিনি। এজন্য আমরা পেরেশানিতে ছিলাম। আল্লাহর রহমতে এখন করোনার রেশ ধীরে ধীরে কমছে। একদিন করোনার ভয়কে জয় করে বিশ্ববাসী আবারো প্রাণের স্পন্দন ফিরে পাবে এটাই আমাদের আশা।
তিনি আরো বলেন, আমার অনেক বয়স হয়েছে। কতোদিন আল্লাহ পাক বাঁচিয়ে রাখেন জানি না। আমি বেঁচে না থাকলেও এ মাহফিল জারি থাকবে, আপনারা এ মাহফিল আগলে রাখবেন। এই মাহফিল নিশ্চয়ই আমাদের জন্য নাজাতের উসিলা হতে পারে।

মাহফিলে বিশেষ অতিথি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মহররম মাস কেবল শোক নয়, ত্যাগের চেতনাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় এ মাস।

এতে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার প্রভাষক আল্লামা মীর মুহাম্মদ আলাউদ্দিন আলকাদেরী বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা) এর শাহাদাতের দর্শন হচ্ছে অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং সত্য ও ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা।

হযরত আমিরে মুয়াবিয়া (রা) ও কুস্তুনতুনিয়া যুদ্ধ বিষয়ে আলোচনায় কাটিরহাট মফিদুল ইসলাম ফাযিল মাদ্রাসার প্রভাষক আল্লামা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রিজভি। বলেন, যাবতীয় দুষ্কর্ম ও নবী পরিবারের ওপর জঘন্য নির্মমতার জন্য ইয়াজিদই দোষী, অপরাধী ও ঘৃণার পাত্র। প্রসিদ্ধ সাহাবি হযরত আমিরে মুয়াবিয়া (রা) পুত্র ইয়াজিদের দুষ্কর্মকে কখনোই প্রশ্রয় দেননি। তাই হযরত আমিরে মুয়াবিয়া (রা.) একজন শীর্ষস্থানীয় মান্যবর সাহাবী ও ওহি লেখক ছিলেন এটা মানাই ইসলামের নির্দেশনা। পুত্রের অপকর্মের দায় পিতার ওপর চাপানো অবশ্যই জুলুম। যারা অযথা সাহাবিদের নিন্দা করে তারা ফাসেক, সীমালংঘনকারী ও ইসলামের দৃষ্টিতে বড়ই ঘৃণ্য ও দুর্ভাগা। দেশে দেশে আহলে বায়তে রাসূলের চর্চা প্রসঙ্গ : বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনায় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মাওলানা সৈয়দ হাসান আজহারি বলেন, বিপদে মুসিবতে ধৈর্য ধারণ এবং সর্বদা নামাজ কায়েম করাই হযরত ইমাম হোসাইন (রা) ও শাহাদাতে কারবালার শিক্ষা। নবী পরিবারের সদস্যগণ কঠিন বিপদেও ধৈর্য হারাননি এবং নামাজও ছাড়েননি। এর থেকে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আছে।

কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন বিশ্বনন্দিত কারী শায়খ আহমদ নায়না (মিশর) ও আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী।

মাহফিলে অতিথি ছিলেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া চিশতিয়া আজিজিয়ার সাজ্জাদানশিন পীরে তরিকত অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন আলকাদেরী, শাহজাদা শাহসুফি সৈয়দ মিফতাহুন নূর মাইজভা-ারী, শিল্পপতি হাজী জানে আলম, ওসি আব্দুল করিম, ব্যবসায়ী-সমাজসেবী মুহাম্মদ আলমগীর পারভেজ।

মিলাদ কিয়াম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি-কল্যাণ এবং বিশ্বের নির্যাতিত মানবতার পরিত্রাণ কামনায় মুনাজাত করা হয়।
প্রতিদিন সুফি টিভি ইউটিউব ফেসবুকে মাহফিল সরাসরি লাইভ দেখানো হচ্ছে। মসজিদের নিচতলায় পর্দা সহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি