অস্বস্তি আড়াল করে জয়ের হাসি বাংলাদেশের

সুপ্রভাত ডেস্ক »

৩৫ মিনিট, ৯ ওভার, ৬ রান। বাংলাদেশের দুর্ভাবনা দূর করার সংখ্যামালা। আগের দিন শেষে শঙ্কার কালো মেঘ একটু হলেও দানা বেঁধেছিল। চতুর্থ দিন সকালে ঝলমলে রোদের মতোই তেজোদীপ্ত বোলিংয়ে ইবাদত হোসেন চৌধুরি মুড়িয়ে দিলেন আইরিশদের লেজ। এরপর রান তাড়া খুব মসৃণ না হলেও প্রত্যাশিত জয়কে সঙ্গী করে মাঠ ছাড়তে পারল বাংলাদেশ।

তৃতীয় দিন দারুণ প্রতিরোধ গড়া আয়ারল্যান্ড বেশিক্ষণ টিকতে পারল না চতুর্থ দিনে। মিরপুর টেস্ট ৭ উইকেটে জিতে নিল বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজের।

আগের দিনের রানের সঙ্গে আরও ৪০-৫০ রান যোগ করে বাংলাদেশকে ১৮০ রানের পাশেপাশে কোনো লক্ষ্য দিতে চেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। কিন্তু শেষ দুই উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে তত দূর যেতে দেননি ইবাদত। আগের দিনের সঙ্গে ৬ রান যোগ করেই আইরিশদের ইনিংস থামে ২৯২ রানে।

চতুর্থ দিন সকালে দারুণ বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডের শেষ দুই উইকেট নেন ইবাদত হোসেন চৌধুরি। ১৩৮ রানের লক্ষ্য ছুঁতে বাংলাদেশের লাগে ২৭.১ ওভার।
ওপেন করে লিটন কুমার দাস খেলেন ক্যামিও ইনিংস। অনেকটা সময় টিকে থেকে তামিম ইকবাল ফেরেন বাজে শটে। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিম খেলা শেষ করেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অপরাজিত ফিফটিতে।

বাজে শটে আউট হয়ে ফেরেন তামিম ইকবাল।
টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করতে পারলেন। ম্যাচ অব দা ম্যাচও তিনিই। দেশের মাঠে ৮ টেস্ট পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। সবশেষ জয়টি ছিল ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরেই।

সকালে দুই পাশে তাইজুল ও মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন দিয়ে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে মিরাজের দুই ওভার শেষেই আক্রমণে বল তুলে দেন তিনি ইবাদত হোসেন চৌধুরির হাতে। দ্বিতীয় বলেই এই পেসার সরিয়ে দেন মূল বাধা অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে। দুর্দান্ত ডেলিভারিতে স্টাম্প উপড়ে যায় তার। আটে নেমে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের লড়িয়ে ইনিংস থামে ৭২ রানে।

এরপর ইনিংস শেষের অপেক্ষা। সেটিও হয় ইবাদতের হাত ধরেই। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন গ্রাহাম হিউম। ইবাদত শেষ করেন তিন উইকেট নিয়ে। তাইজুলের এক উইকেটের আক্ষেপ রয়েই যায়। ম্যাচ শেষ করেন তিনি ৯ উইকেট নিয়ে।

রান তাড়ার শুরুতেই চমক উপহার দেয় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত নন, তামিমের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন লিটন। সবশেষ ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ইনিংস শুরু করেছিলেন তিনি।

ইনিংসের দ্বিতীয় বলে তামিমের বাউন্ডারিতে শুরু হয় বাংলাদেশের রান তাড়া। ব্যাটিং অর্ডারে কেন পরিবর্তন, লিটন তা বুঝিয়ে দেন একদম শুরু থেকেই। প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ম্যাকব্রাইনকে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন তিনি, পরের বলে মারেন বাউন্ডারি।

শুধু স্পিনে নয়, মার্ক অ্যাডায়ারের পেসে দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি নান্দনিক এক গ্লাইড ও চোখধাঁধানো লফটেড অফ ড্রাইভে। লিটনের ছোট্ট বিনোদন শেষ হয় অ্যাডায়ারের বলেই অদ্ভুতভাবে। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে একটু আগেই ব্যাট চালিয়ে দেন তিনি। বল তার হেলমেটে লেগে হাতে লেগে পেছনে গিয়ে গড়িয়ে লাগে স্টাম্পে।

তিনে নেমে শান্ত দারুণ এক অফ ড্রাইভে চার মারলেও পরের ওভারে ম্যাকব্রাইনের বলে ক্যাচ দেন স্লিপে। বারবার টিভি রিপ্লে দেখে আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার। তবে মাঠের আম্পায়ারের সফট সিগন্যাল ‘নট আউট’ পাল্টে দেওয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ ছিল কি না, সেই প্রশ্নের অবকাশ অবশ্য থাকল।

ক্যারিয়ারে প্রথমবার একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করে ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম।

দ্রুত দুই উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে চাপে পড়তে দেননি মুশফিকুর রহিম। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই সুইপ, কাট আর ড্রাইভ খেলে আইরিশ স্পিনারদের এলোমেলো করে দেন তিনি। রান বাড়তে থাকে তরতরিয়ে। আরেকপাশে তাকে সঙ্গ দিয়ে যান তামিম।

এই জুটি অবশ্য খেলা শেষ করতে পারেনি। লাঞ্চের পর লেগ স্পিনার বেন হোয়াইটের অতি নিরীহ শর্ট বল গায়ের জোরে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে তামিম তুলে দেন শুধু আকাশে। ইনিংস থামে ৬৫ বলে ৩১ রান করে।

আয়ার‌ল্যান্ড উইকেট পেতে পারত আরও একটি। কিন্তু ম্যাকব্রাইনের বলে মুমিনুল হককে স্টাম্পিং করার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন কিপার লর্কান টাকার।
মুমিনুল পরে বেন হোয়াইটের বলে ছক্কায় দলকে এগিয়ে নেন জয়ের কাছে। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০৪ ইনিংসে যা তার মাত্র নবম ছক্কা।

জয়সূচক রানটি আসে ম্যাচের সেরা মুশফিকের ব্যাট থেকেই। ৪৮ বল খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি ৭ চারে ৫১ রান করে।

বাংলাদেশের পরের আন্তর্জাতিক লড়াই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই, আগামী মাসে ইংল্যান্ডে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। আইরিশরা এখান থেকে শ্রীলঙ্কায় যাবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে।