অরক্ষিত সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় বনাঞ্চল

নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছ

নিজস্ব প্রতিনিধি, সীতাকুণ্ড »

বঙ্গোপসাগরের মোহনা তথা প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সীতাকুণ্ড উপজেলার উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল কাঠচোরদের উৎপাতে হুমকির মুখে। অথচ উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষের প্রাকৃৃতিক দুর্যোগ নিরাপত্তায় উপকূলীয় এই সবুজ বেষ্টনী। এই উপকূলের ১০ হাজার একর বনভূমির মধ্যে ৬ হাজার একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। এসব রক্ষার্থে ৪টি বিটে বিভক্ত হয়ে ১২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োজিত আছেন যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম।

সরেজমিনে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়াকূল, মুরাদপুর ইউনিয়নের ভাটেরখীল সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাকখালী ও বগাচরের উপকূলীয় এলাকায় দেখা যায়- বেড়িবাঁধ থেকে কয়েক কিলোমিটার সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত সৃজন করা বনাঞ্চলের অধিকাংশই বিলীন হয়ে গেছে গাছ কাটার কারণে। অন্যদিকে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে মাটিসমেত গাছ ঢলে পড়ছে। পড়ে থাকা গাছগুলো শুকনো হলে কেটে নিয়ে যাচ্ছে কাঠচোর চক্র, এতে মাথাব্যথা নেই উপকূলের বন বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের। কাঠ চোরচক্র স্থানীয় বনকর্মীদের ফাঁকি দিয়ে কিংবা ম্যানেজ করে উজাড় করেছে কেওড়া, বাইন, গেওয়া, ঝাউসহ নানান প্রজাতির উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী বৃক্ষরাজি। চারটি বিটের মধ্যে বেশি গাছ কাটা হয়েছে বাঁশবাড়িয়া বিট এলাকায়। অথচ ১৯৭৯ সালে এখানে সীতাকুণ্ডের কুমিরা উপকূল হতে মিরসরাইয়ের ইছাখালী পর্যন্ত উপকূলের অন্তত অর্ধশত বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সৃজন করা হয়েছিল দেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন।

এরপর সর্বশেষ ২০১২ সালে দ্বিতীয় দফায় খালি থাকা এবং সৃষ্ট হওয়া বনভূমিতে বৃক্ষরাজি রোপণের মাধ্যমে আবারো সৃজন করা হয় বনাঞ্চল। এই অঞ্চলে পর্যটকরা নৌকা নিয়ে সাগরপানে ছুটে চলে বাইরের নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করত। সেসব সংরক্ষিত বনাঞ্চল যথাযথ কর্তৃপক্ষ তথা উপকূলীয় বনরক্ষীদের উদাসীনতায় এখন অরক্ষিত।

এ ব্যাপারে বাঁশবাড়িয়া উপকূলীয় বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, বাঁশবাড়িয়া হতে গুলিয়াখালি বনবিট এলাকা পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কি.মি. এলাকার জন্য আমাদের বিট অফিসের লোকবল সংখ্যা মাত্র ৪ জন। কাঠচোরের দল আমাদেরকে পাহারা দিয়ে সুযোগ বুঝে গাছ কাটা কেটে নিয়ে যায়। আমরা এদের বিরুদ্ধে গত এক বছরে ৫টি মামলা দিয়েছি। গত দুমাস আগেও একটি মামলা দিয়েছি।

সীতাকুণ্ড উপকূলীয় বনাঞ্চল কর্মকর্তা (রেঞ্জার) কামাল উদ্দিন জানান, ২০১৯ সালে ৬ হাজার একর বনভুমিকে সংরক্ষিত বিবেচনায় এনে বিশেষ কর্মসূচি রাখা হয়েছিল। বাস্তবে বাঁশবাড়িয়া, ভাটেরখীল, বাঁকখালী ও বগাচতর এই ৪ বিটে বিভক্ত করে ৪ জন বিট কর্মকর্তা ও তাদের সাথে ২ জন করে মালি রয়েছে। প্রতি বিটে যেখানে ১০ জন লোক প্রয়োজন সেখানে এই সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি কম। তাছাড়া এসব কাজে আমাদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থাও নেই। পড়ে যাওয়া গাছগুলো আমরা নিলামে দিতে চাই। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে গাছগুলো জ¦ালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার ছাড়া অন্যকাজে ব্যবহারযোগ্য নয়, পরিবহন খরচও বেশি, তাই টিম্বাররা কিনতে আসে না। কাঠচোরদের বিরুদ্ধে গত এক বছরে মাত্র ৫টি মামলা হয়েছে।

উপকূলীয় বনাঞ্চল ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। এ অঞ্চলের সংরক্ষিত উপকূলীয় বনভুমির দিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি এখনও সচেতন না হয় তাহলে জলোচ্ছ্বাস কিংবা দুর্যোগ থেকে বাঁচানো যাবে না ফসল, ক্ষেত-খামার, সহায়-সম্পদ, প্রান্তিক অর্থনীতি তথা এলাকায় বসবাসরত প্রায় ২ লাখ মানুষকে।