অনিশ্চিত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও চার শিক্ষকের জীবন

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতির নানা অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া »

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিদ্যালয় কমিটির সাবেক সভাপতির প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকিতে জিম্মিদশায় পড়েছেন কর্মরত শিক্ষকরা। চকরিয়া প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সভাপতির নানা অনিয়মের বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সরকারি নীতিমালায় বলা আছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ হবে তিনবছর। কমিটির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত সভাপতি উল্লেখিত সময়ে দায়িত্ব পালন করবেন এটিও বলা আছে। কিন্তু সরকারি সেই নীতিমালা মানতে নারাজ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের মুছারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সাবেক সভাপতি আমিনুল মোস্তাফা। তিনি বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা। অপরদিকে তাঁর স্ত্রী আরেফা বেগম জাতীয় করণের আগে একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। জাতীয়করণের পরে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে আরেফা বেগমকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পান ওই বিদ্যালয়ে। অন্যদিকে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হলে আমিনুল মোস্তাফা পুনরায় সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। মেয়াদ শেষে নতুন নির্বাচনে তিনি সভাপতি হতে পারেনি। একদিকে নিজেকে সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে হয়, অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে স্ত্রীকে সহকারী শিক্ষক পদ নিয়ে থাকতে হয়। এই দুইটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমিনুল মোস্তাফা কারণে-অকারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়েছেন তিনি। অবশ্য নানা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয়ও নিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান সভাপতি আবু জাফর রিপন বলেন, অভিযুক্ত আমিনুল মোস্তফার নানাধরণের হুমকি ধমকির মুখে বিদ্যালয় থেকে একের পর শিক্ষক চলে গেছেন। এতে লেখাপড়ার কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে ২০২০ সালের শুরুতে বিদ্যালয়ের জন্য ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় নেজামউদ্দিন ছিদ্দিকী নামের একজন প্রধান শিক্ষককে প্রশাসনিকভাবে নিয়োগ দিয়ে পাঠান শিক্ষা বিভাগ। কিন্তু ওই শিক্ষক যেদিন বিদ্যালয়ে আসেন সেইদিনই যোগদানে বাঁধা দেন আমিনুল মোস্তফা। আবু জাফর রিপন আরও বলেন,স্ত্রীকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করার ঘটনায় ফের ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আমিনুল মোস্তফা। এরই জেরে তিনি গত ৬ এপ্রিল বিদ্যালয়ে এসে বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ অবস্থায় চারদিন বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ঘটনাটি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অভিযুক্ত আমিনুল মোস্তাফার স্ত্রী আরেফা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করে।চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ দাবি করেন,নানা হুমকি ধমকির কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদানে যেতে সাহস পাচ্ছেনা কর্মরত শিক্ষকরা। জীবনহানির আশঙ্কা থাকায় সর্বশেষ রোববার চকরিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছে শিক্ষকরা। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়াও বন্ধের উপক্রম হয়েছে।অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত আমিনুল মোস্তাফার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁর মুঠোফোনে কল দেয়া হলে বারবার ফোনটির সংযোগ লাইন বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।