অঘোষিত বিনোদন কেন্দ্র শাহ আমানত সেতু

দুর্ঘটনার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক »
মিনি ট্রাকের উপর লাউডস্পিকারে বাজছে ‘ইস্কুল খুইালাছে রে মওলা ইস্কুল খুইলাসে/ গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী ইস্কুল খুইলাসে।’ রাস্তায় একদল যুবক উদোম গায়ে বেসামাল নাচছে। শুক্রবার বন্ধের দিনে শাহ আমানত সেতুর উপরে একটু ‘চিল’ করতে এসেছে বলে জানান তারা।
ব্যস্ত সেতুর উপর এ ‘চিল’ কতটা নিরাপদ?
জানা গেছে, চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান সড়ক ও সেতু শাহ আমানত সেতু। এ সেতুতে প্রতিদিন বড়-ছোট হাজারো পরিবহন পারাপার হচ্ছে। সপ্তাহের ছয় দিন মানুষের আনাগোনা কম থাকে। কিন্তু শুক্রবার আসলেই সেতুর উপরে হাজারো দর্শনার্থী মানুষের ঢল নামে। এ সেতুকে বিনোদন কেন্দ্র ভেবে অবসর কাটাতে যাচ্ছেন। তবে এ সেতু হেঁটে পার হতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কারণ এতে রয়েছে ওয়াকওয়ে (হাঁটা রাস্তা)। কিন্তু বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এটি বিপদজনক। কিন্তু এমন মরণ ফাঁদে কেন পা দিচ্ছে সাধারণ মানুষ? এমন প্রশ্নের জবাবে মেহজাবিন বলেন, ‘সেতু তৈরির পর থেকে এ সেতু দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জড়ো হচ্ছে। কিন্তু এমন দর্শনার্থীর জন্য এ সেতু খুবই বিপদজনক। এসব দেখার কর্তৃপক্ষ কারা তো জানা নেই। তবে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। নয়তো বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কিছু বেপরোয়া উচ্ছৃঙ্খল মানুষ রাস্তায় নেমে সেতুর মনোরম পরিবেশ নষ্ট করছে। মূলত সচেতনতা ও সেতুর ব্যবহারবিধি না থাকায় এমন হচ্ছে।’
নাচতে থাকা যুবক রনি বলেন, ‘শুক্রবার উপলক্ষে একটু চিল করছি।’ তবে ব্রিজের উপর কেন জানতে চাইলে অন্য একজন বলেন, ‘ব্রিজ বানানো হয়েছে ঘুরার জন্য। তাই ঘুরতে এসে একটু মজা করছি। আমাদের কারণে এখানে ঘুরতে আসা মানুষও গান শুনতে পারছে।’
ওই মিনি ট্রাকের চালক মো. শামীম বলেন, ‘এলাকার ছোট ভাইদের আবদারে শুক্রবার ছুটির দিন উপলক্ষে একটু আনন্দ করছি। আনোয়ারা পার্কি চর বিচ থেকে ঘুরে আসার পথে ব্রিজে একটু দাঁড়ালাম। গান বাজানোর কারণে এখানে ঘুরতে আসা মানুষও একটু আনন্দ করতে পারছে।’
শুধু তাই নয়, নান রঙের আলোকসজ্জায় ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে পশরা সাজিয়ে বসেছে আশপাশের এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। রয়েছে রকমারি খাবারও। ঘুরতে আসা মানুষ এসব ভাসমান দোকান থেকে খাবারের খোরাগ পুষিয়ে নিচ্ছে। তবে সড়কে ওয়াকওয়ে (হাঁটা রাস্তা) থাকলেও এসব দোকান সরাসরি সড়কের উপর বসানো হয়েছে। এতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সেতু পারাপার করা পরিবহনের। বাস চালক সেলিম রহমান বলেন, ‘সপ্তাহের অন্যান্যদিন ব্রিজ ফাঁকা থাকে। কিন্তু শুক্রবার আসলেই মানুষ ভর্তি এ ব্রিজে চলাচল দায়। খুবই সাবধানতার সাথে গাড়ি চালাতে হয়। কোনদিকে থেকে সামনে মানুষ পড়ে যায় বা দুর্ঘটনার ভয় কাজ করে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সজাগ হতে হবে। নয়তো বড় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মানুষের মধ্যে সচেতনতা প্রয়োজন বলে জানালেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রফিক ডিসি (দক্ষিণ) এন এম নাসিরউদ্দীন। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘শাহ আমানত সেতু বর্ডার এরিয়া হওয়াতে মূল বিপত্তিটা হচ্ছে। এসব উচ্ছেদে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মানুষ ব্রিজে বেড়াতে না গেলে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসবে না। গত বুধবার ১০টি ভ্রাম্যমাণ দোকান জব্দ করেছি। তবে মানুষ সচেতন হলেই এমন রিস্কি জায়গায় এমন কার্যকলাপ করবে না।’