চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ঝরে পড়েছে ১৯,৪৯৯ জন

কাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা

এসএসসি পরীক্ষার্থী (ফাইল ছবি)

নিজস্ব প্রতিবেদক »
অবশেষে শুরু হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষা। গত বছর এসএসসি পরীক্ষার পরপরই করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় দেশজুড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া পাবলিক পরীক্ষা আবার এসএসসি দিয়েই আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৬১ হাজার ১২২ জন। এরমধ্যে নিয়মিত ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৫ জন, অনিয়মিত ২৬ হাজার ৮৩১ এবং মানোন্নয়ন দিচ্ছে ১০৬ জন।
এদিকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার জন্য নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিবন্ধিত ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৮৪ জন, কিন্তু তাদের মধ্যে অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৫ জন। ফলে দেখা যাচ্ছে নিবন্ধিত হয়েও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না ১৯ হাজার ৪৯৯ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ এসব শিক্ষার্থী ঝরে গেছে। ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মেয়ে। ১৯ হাজার ৪৯৯ জনের মধ্যে ১২ হাজার ৭৩৪ জন মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে।
বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা গেছে, এবারের ১ লাখ ৬১ হাজার ১২২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষা দিতে হবে না ৯ হাজার ৫২৭ জনের। এসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা ছাড়াই পাশের সনদ পাবে। এই পরীক্ষার্থীরা বিগত বছরগুলোতে আবশ্যিক বিষয়ে ফেল করেছিল। এবার যেহেতু আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা হচ্ছে না, শুধু তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা হচ্ছে তাই তাদের পরীক্ষা দিতে হবে না। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের ৩১ হাজার ৭৩ জন, মানবিকের ৬৫ হাজার ২৪৬ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৬৪ হাজার ৮০৩ জন। এরমধ্যে চট্টগ্রামের ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৭ জন, কক্সবাজারের ২৫ হাজার ৯৩৭ জন, রাঙামাটির ৯ হাজার ৩৭২ জন, খাগড়াছড়ির ১০ হাজার ৬৩৭ জন এবং বান্দরবানের ৫ হাজার ২২৯ জন। এবারের এসএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র, বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম পত্র, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র, আইসিটি, গণিত, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, বাংলাবেশ ও বিশ্ব পরিচয় ( বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য) এবং সাধারণ বিজ্ঞান ( মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য) বিষয়গুলো হলো আবশ্যিক। করোনা মহামারীর কারণে এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা এবার পরীক্ষা দিতে হবে না। শুধুমাত্র তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা দেবে শিক্ষার্থীরা। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান এবং উচ্চতর গণিত অথবা জীব বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দেবে। মানবিকের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগোল এবং অর্থনীতি বা পৌরনীতি বিষয়ে পরীক্ষা দেবে। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা হিসাব বিজ্ঞান, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়ে পরীক্ষা দেবে। আবশ্যিক বিষয়গুলোর নম্বর পূর্ববর্তী জেএসসি পরীক্ষা থেকে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে সমন্বয় করে ফলাফল প্রস্তুত করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। আর সে হিসেবে আগামীকাল রোববার (১৪ নভেম্বর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রতি গ্রুপের শিক্ষার্থীরা তিনটি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিবে। এরমধ্যে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে সৃজনশীল ৮টি প্রশ্ন থেকে দুটি এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ২৫টি থেকে ১২টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয়গুলোতে ১১টি সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে ৩টি এবং ৩০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থেকে ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষার মোট সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, প্রতি পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের মানবণ্টন ও সময়ের বিষয়টি জানিয়ে দিতে হবে। কেন্দ্র সচিবগণ যাতে কক্ষ পরিদর্শকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে মানবণ্টন বলে দেয়। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা ভুল করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, একইসাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি বেঞ্চে একজন করে পরীক্ষার্থীর সিট বসাতে হবে। কেন্দ্র ভিড় কমাতে একজন পরীক্ষার্থীর সাথে যাতে একজন করে অভিভাবক আসে সেবিষয়ে সচেতন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার পরপরই শুরু হয়েছিল করোনা মহামারি। এই মহামারীর কারণে গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল অনেক দেরিতে। কিন্তু গত বছর যথাসময়ে নিতে পারলেও এবছর করোনার কারণে যথাসময়ে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে সিলেবাস কমিয়ে এবং অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বইমুখী করে পাঠ্য কার্যক্রম চালিয়ে আসা হয়েছে। আর তাই স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে শুধুমাত্র নৈর্বাচনিক বিষয়ে (তিনটি বিষয়) পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। আগামী ১৪ নভেম্বর শুরু হয়ে তা ২৩ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পরীক্ষার নম্বরও অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে মানবণ্টন জানিয়ে দেয়া হয়েছে।