অক্সিজেন যন্ত্র, ভেন্টিলেটর পড়ে আছে গুদামে : দায়ীদের চিহ্নিত করুন

কোভিড-১৯ এ সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য অক্সিজেন পেতে স্বজনরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন, অনেক রোগী এই আনা নেওয়াতে মৃত্যুবরণ করেছেন, রাজধানীর কোনো হাসপাতালে আইসিইউ, বেড খালি নেই, জেলা-উপজেলায় হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার অপ্রতুলতার কারণে রোগীরা ছুটছেন ঢাকায়, চট্টগ্রামসহ বড় বিভাগীয় শহরগুলিতে-এ দৃশ্য নিয়তই গণমাধ্যমে আসছে। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রাপ্যতার এই নিদারুন পরিস্থিতিতে একটি জাতীয় দৈনিকের ১৪ এপ্রিল’ ২০২১ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে সংগ্রহ করা জীবন রক্ষাকারী সামগ্রীর অনেকগুলি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পড়ে আছে ১০ মাস ধরে। পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ এর জন্য অর্থ বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর এডিবি’র প্রকল্প ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিকটেন্স’ এর জন্য বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের কিছু চিকিৎসাসামগ্রী হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে আটকে আছে। এগুলোর মধ্যে ১ হাজার ২০০টি অক্সিজেন কনসেন্টাটের (এই যন্ত্র বাতাস থেকে অক্সিজেন পৃথক করে তা ব্যবহার উপযোগী করে তোলে), বিপুল পরিমাণ পালস অক্সিমিটার হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা, মাস্ক পিপিইসহ নানা সামগ্রী। কে সই করে মালামাল ছাড়াবে তা নিয়ে জটিলতার কারণে এসব চিকিৎসা সামগ্রী ১০ মাস ধরে পড়ে আছে। একই প্রকল্পের আওতায় আনা ৩০০ ভেন্টিলেটার কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পড়ে রয়েছে।
এডিবি’র অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের ১৭০টি আধুনিক আইসিইউ শয্যা, ১৭০টি ভেন্টিলেটর, ১০৭টি আরটি পিসিআর যন্ত্র কেনার কথা, কেবল কয়েকটি আরটিপিসি যন্ত্র কেনা হয়েছে। অথচ করোনার এই চিকিৎসা সংকটে বরাদ্দ অনুসারে মালামাল দ্রুত সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
দুই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকরা বলছেন, তারা কিছুদিন আগে দায়িত্ব পেয়েছেন, কিন্তু এটি তো যথাযথ দায়িত্ব পালনের কথা নয়। তারা কি চোখ বুলিয়ে দেখেননি প্রকল্পের আস্থা কোন পর্যায়ে। গত ১১ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে এই দুটি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সভা হয়েছে। করোনার মত জাতীয় বিপর্যয়ে যেখানে জীবন রক্ষাকারী এসব সামগ্রী দ্রুত সংগ্রহ করে সেবা কাজে লাগানোর কথা সেখানে এগুলি এখনো বিমানবন্দরে এবং কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের গুদামে পড়ে আছে। এটি স্পষ্টতই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলাও এক ধরণের নিষ্ক্রিয়তার নামান্তর।
করোনার কালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতি, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা গণমাধ্যমের কারণে দেশবাসী জানতে পেরেছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মকর্তাদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্নে উঠেছে। করোনার ১ বছরের এত মৃত্যু, সংক্রমণ সত্ত্বেও চিকিৎসা সেবার উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি। তবে এটা ঠিক যে, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবন বিপন্ন করে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন, অনেকে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন, জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করে।
এখন করোনা আরো প্রাণঘাতি রূপে দেখা দিয়েছে। মৃত্যু সংক্রমণ বাড়ছে। আমরা মনে করি যে সব জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী গুদামে আটকে আছে সেগুলি সংগ্রহ করে দ্রুত দেশের হাসপাতালগুলিতে পৌঁছে দিতে হবে। প্রকল্পের বাকি সামগ্রী অবিলম্বে সংগ্রহ করতে হবে। যারা এসব সামগ্রী সংগ্রহে জটিলতার সৃষ্টি করেছেন কিংবা অবহেলা দেখিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা বাঞ্ছনীয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনিয়ম, দুর্নীতি অব্যবস্থাপনার যে পাহাড় জমে উঠেছে, জনস্বার্থে এবং সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে সে সবের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। জাতি এখন দুর্যোগে, এ সময় মানুষ অনিয়মের সাতকাহন শুনতে চায়না, চিকিৎসাসেবা যথাযথভাবে পেতে চায়।