একুশ শিখিয়েছে, মাথা উঁচু করে চলব : প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »
একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘কারও কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয়; আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারণ একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করতে। মাথা নত করে আমরা চলব না, মাথা উঁচু করে চলব।’ খবর বিডিনিউজের।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ; ওই রক্তের দামে এসেছিল বাংলার স্বীকৃতি আর তার সিঁড়ি বেয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
সেই ইতিহাস অনুষ্ঠানে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে বাঙালিরা রক্ত দিয়েছে, রক্তের অক্ষরে ভাষার অধিকারের কথা লিখে গেছে। পাকিস্তানি শাসকরা যখন আমাদের মায়ের ভাষার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আমরাই ছিলাম বেশি। আর যে ভাষাটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, উর্দু, সেটা কারও মাতৃভাষা নয়, গোটা পাকিস্তানের ৭ ভাগ লোকও এটা ব্যবহার করত কিনা সেটাই প্রশ্ন।
অথচ আমরা বাঙালিরা ছিলাম প্রায় ৫৫ ভাগ। আমাদের ভাষা কেড়ে নিয়ে সেই বিজাতীয় একটা ভাষা যখন আমাদের চাপিয়ে দিতে চায়, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র এবং তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তমুদ্দিন মজলিশসহ আরও কয়েকটি সংগঠন নিয়ে বাংলা ভাষাকে রক্ষার জন্য সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন এবং আন্দোলন শুরু করেন। সেই আন্দোলনের পথ ধরেই আমরা আমাদের স্বাধিকার আদায় করেছি, স্বাধীনতা পেয়েছি।’
ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে সারা বাংলাদেশ সফর করে মানুষকে যখন সংগঠিত করছিলেন, তখনই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ দেশের প্রতিটি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান রয়ে গেছে।’
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা পঁচাত্তরের পর ইতিহাস থেকে যে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, সে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বলে গেছেন, ১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবল ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এই আন্দোলন ছিল সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। পঁচাত্তরের পরে বিজয়ী জাতি হিসেবে সেই মর্যাদাটা বাঙালি জাতি হারিয়ে ফেলেছিল। আবার বাঙালি বিশ্বের দরবারের মাথা উঁচু করতে পারে সেই মর্যাদা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। এই মর্যাদা আমাদেরকে সমুন্নত রেখে আমাদের আগামী দিনে এগিয়ে যেতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, আমরা সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করি। এখানে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য যারা কাজ করেছেন, তাদের আমরা সম্মান করার চেষ্টা করছি। আজকে যার পুরস্কার পেয়েছেন তাদেরকে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি।’
এ বছর সমাজসেবায় একুশে পদক পাওয়া মো. জিয়াউল হকের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, যিনি দারিদ্র্যের কারণে নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি, এটা তার ভেতরে একটা দুঃখ যন্ত্রণা ছিল। কিন্তু তিনি থেমে যাননি। সাধারণ কাজ করে, দই বিক্রির একটি ছোট দোকান দিয়ে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছিলেন, কিন্তু সাথে সাথে অন্যের মাঝে জ্ঞানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি একটি পাঠাগার তৈরি করেন, পাঠাগার তৈরি করে সাধারণ মানুষের পড়াশোনার সুযোগ করে দেন, তিনি একটি স্কুল তৈরি করে দেন। আমি তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাকে পুরস্কার দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।’
বিভিন্ন এলাকায় যারা সমাজের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের খুঁজে বের করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
জিয়াউল হকের প্রতিষ্ঠিত পাঠাগার ও স্কুল সরকারি করার আশ্বাস দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি যে পাঠাগারটা করেছেন, তিনি আমাকে কিছুক্ষণ আগে বলেছেন, তার জন্য একটা স্থায়ী ভূমি দরকার, একটা পাঠাগারের জন্য একটা বিল্ডিং দরকার। আমি করে দেব। পাশাপাশি উনি যে স্কুলটা করেছেন, উনি যদি চান এটা সরকারি হোক, আমি এর খোঁজ খবর নেব এবং যথাযথভাবে এটা করে দেব।
‘কেন করে দেব? যে মানুষটা সারাজীবন ত্যাগ করেছেন মানুষের জন্য, তাদের জন্য করা আমার দায়িত্ব। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না। আমি জাতির পিতার কন্যা হিসেবে বলছি। আমি প্রধানমন্ত্রী না হলেও আমি যদি জানতাম তাহলেও আমাদের মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড থেকে আমি সহযোগিতা দিতাম। যারা জনগণের সেবা করে, তাদের সেবা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি।’