অক্টোবর মাসেই মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

সাংগঠনিক ভিত্তির কারণে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি : হানিফ

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বৈরী সময় ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা হলেও সাংগঠনিক কাঠামোর শক্তিশালী ভিত্তির কারণে এ সংগঠনটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রীক পুরাণের মিথ ফিনিক্স পাখির মতন ছাইভস্মের মধ্যেও বার বার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস যেমন জনগণ আওয়ামী লীগের ভিত্তি ও অস্তিত্ব নির্ভরশীল শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির উপরই।

তিনি গতকাল রোববার সকালে নগরীর সেনাকল্যাণ কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও তার আওতাধীন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এখনো পর্যন্ত যে সকল ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন হয়নি জুলাই মাসের মধ্যেই এগুলোর সম্মেলন ও কমিটি গঠন অবশ্যই করে ফেলতে হবে। আগস্ট মাস যেহেতু শোকের মাস, এসময় আওয়ামী লীগের কোনো স্তরের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের অবকাশ নেই। সেপ্টেম্বর মাসকে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে ধরে নিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাসে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের জেলা স্তরের যে সাংগঠনিক কমিটিগুলো রয়েছে তার মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি অন্যতম শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বরাবরই তার সাংগঠনিক সক্ষমতার দক্ষতা দেখিয়েছে এবং যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দলের শক্তিশালী ভিত্তিকে সুদৃঢ় রেখেছে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষায় নবীণ-প্রবীণের সমন্বয়ে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তিকে সুদৃঢ় ও বিস্তৃত করার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই ব্যক্তির পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়টি কখনো মুখ্য হতে পারে না। নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার মধ্যেই হওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা সংগঠনের বিভিন্ন ধাপ ও স্তরগুলোতে নেতৃত্ব যদি সমঝোতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে দলীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শক্তির পরিমাপ ও ঘনত্ব ভারি হয়। নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাভুটির বিষয়টি থাকলে কেনা-বেচা হওয়ার সুযোগ থাকে এবং পারস্পরিক বিভক্তি সৃষ্টিরও আশঙ্কা দেখা দেয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেছেন, আওয়ামী লীগ টানা চারবার ক্ষমতায় আছে- এ নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ধস নামানো বিজয় অর্জিত হয়েছিল প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এই প্রতিপক্ষ ছিল নেতৃত্বহীন বিএনপি নামক একটি প্লাটফর্ম এবং স্বাধীনতা ও দেশ বিরোধী রেজিমেন্টাল জামায়াতে ইসলামী ও প্রতিক্রিয়াশীল ডান ও অতিবাম শক্তির মোর্চা। কিন্তু পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনগুলোতে আমাদের কোনো প্রবল প্রতিপক্ষ না থাকলেও দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি খুব একটা শক্তিশালী হয়নি। বরং নিজেদের মধ্যে কলহ, বিবাদ ও বিভক্তি বেড়েছে। আরো বেড়েছে দলের মধ্যে হাইব্রিডের প্রবল স্রোত। প্রধানমন্ত্রী বার বার বলেছেন, নিজস্ব  গ্রুপ ও প্রভাব বলয় বৃদ্ধির জন্য বাইরে থেকে ভিন্ন মতের মানুষ দলে ঢুকানোর কোনো প্রয়োজন নেই।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির আওতাধীন ২৭টি ইউনিট ও ২৯টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ১৫ টি থানার মধ্যে একটি থানা আওয়ামী লীগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের যে সকল কমিটির সম্মেলন হয়নি সেগুলো মূলত পরিস্থিতিগত কারণে নয়, স্থানীয় নেতৃত্বের অনীহা ও আন্তরিকতার অভাবের কারণে। মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটি থেকে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সম্মেলন কেন হয়নি এ ব্যাপারে তারা অবগত আছেন। তবে এটাও ঠিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে স্থানীয় নেতৃত্ব যদি ঐকমত্যে না পৌঁছে সেখানে কিছুতেই জোর করে সম্মেলন করতে হবে এমন মনোভাব চাপিয়ে দেয়া যায় না। স্থানীয় নেতৃত্ব যখন যেখানে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সেক্ষেত্রে সর্বাধিক সহযোগিতা প্রদান করে গেছে। তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করেন যে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কখনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে যায়নি এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সকল সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় অনুযায়ী জুলাই মাসের অবশিষ্ট ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সকল কর্মপন্থা চূড়ান্ত করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, মহানগর আওয়ামী লীগসহ তার অধীনস্থ সকল ধাপ ও স্তরের সাংগঠনিক কমিটিগুলোর সম্মেলন ও কমিটি গঠনের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাতে প্রত্যেক নেতাকর্মীর মনোবল চাঙ্গা হয়েছে।

সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপদেষ্টাম-লির সদস্য এ.কে.এম বেলায়েত হোসেন, শফর আলী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এমপি, সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিকুল ইসলাম ফারুক, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ।