২০২৪ এবং একগুচ্ছ সম্ভাবনার হাতছানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সময়ের পরিক্রমায় বিদায় নিয়েছে আরও একটি বছর। নতুন বছর আরও শান্তি, আরও সম্ভাবনা নিয়ে আসবে সে প্রত্যাশায় মানুষ বরণ করে নিচ্ছে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে।
২০২৩ সালের ধারাবাহিকতায় নতুন এ বছরে আমাদের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন তথা সম্ভাবনার হাতছানি লক্ষ্য করা যায়।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনাময় দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গত অক্টোবরে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের পূর্বাভাস অনুসরণ করে বিশ্বজুড়ে দ্রুতবর্ধনশীল দেশগুলোর তালিকা করেছে কানাডাভিত্তিক ওয়েবসাইট ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট। এই তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে ১৬তম অবস্থানে। যদিও সরকার জিডিপি বা গড় প্রবৃদ্ধির হার ২০২৩ সালেই ৭-এর বেশি দাবি করছে। কিন্তু ওয়েবসাইটটি আইএমএফের প্রবৃদ্ধি ধারণাকে তুলে ধরে বলেছে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি হবে ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকার ২০২৪ সালে নতুন অর্থবছরের জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতেরই গড় প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বাংলাদেশের ওপরে।

নতুন শিক্ষাক্রম

এবছর থেকে চালু হচ্ছে আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম (কারিকুলাম)। ২০২৪ সাল থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা রাখা হয়নি। একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বে, সেটি ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের কিছু সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং বিভিন্ন শ্রেণিতে তা পর্যায়ক্রমে চালু করার কথা রয়েছে। সে হিসেবে গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

চট্টগ্রাম নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে- এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে এ বছরের (২০২৪ সালের) জুনে। উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেক বিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট সেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষে টাইগারপাস মোড়ের পর মূলসড়কের ওপর দিয়ে লালখানবাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলবে।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে যেসব যানবাহন বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহার করে নগরীতে আসবে, তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে শহরে প্রবেশ করতে পারবে। পাশাপাশি শহর থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতের সময়ও কমে আসবে এতে।
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র‌্যাম্প থাকবে ১৪টি। এরমধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র‌্যাম্প থাকবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প

চলতি ২০২৪ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। ২০২৯ সালের মধ্যে মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এটি স্থানভেদে কোথাও ছয়লেন, কোথাও আটলেনে উন্নীত করা হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুইপাশের ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে ছয়লেন কিংবা আটলেন বাস্তবায়নে ডিজাইনিং কনসেপ্টে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও ওভারপাস হবে। আবার কোথাও টানেল, কোথাও ইন্টারচেঞ্জ হবে।
এই প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দাতাসংস্থা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। এ বছরের মার্চের মধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হলে জুনের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি তৈরির পর বছরের শেষ নাগাদ এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হবে। পদ্মা সেতুকে সংযুক্তকারী ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের মতোই হবে এই নতুন মহাসড়ক।
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে-আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বলা যায়, বাংলাদেশের নির্বাচন দিয়ে শুরু হচ্ছে বছরটি। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে বিজয়ী দল সরকার গঠনে এগিয়ে আসবে এবং তাদের জনকল্যাণমুখী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন পূরণ হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।