২০২১-২২ বাজেট : করোনাকালে বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ঘাটতি দেখিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বৃহৎ আকারের বাজেট প্রস্তাব রাখলেন গত বৃহস্পতিবার, জাতীয় সংসদে। দেশের ৫০তম বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা।
এর অর্থায়ন হবে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে। বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। করোনার অভিঘাত থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান ও মানুষের জীবন-জীবিকাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭.২ শতাংশ। আয়ের প্রধান উৎস পরোক্ষ কর। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় বেশকিছু কর ছাড়াও অবকাশ দেওয়া হয়েছে। যে সব পণ্যের দাম বাড়বে এবং কমবে সেসব মোটামুটি যৌক্তিক। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা রয়েছে। অতি ধনীদের আয়ে সারচার্জ বাড়ছে, কালো টাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ থেকে সরে এসেছে সরকার। করপোরেট কর হার কিছু কমছে। দুই লাখ টাকার ওপর সঞ্চয়পত্র ও পোস্টাল সেভিংস একাউন্ট খুলতে এবং বাড়ির নকশায় টিআইএন লাগবে। করোনার টিকা সংগ্রহে ১০ হাজার কোটি টাকা পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সংবাদপত্র শিল্পের জন্য কোনো সুখবর নেই। করমুক্ত আয়ের সীমা আগের মতোই ৩ লাখ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা জালে আরও ১৪ লাখ মানুষ যুক্ত হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ২০ হাজার করা হয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিতে নানামুখি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। মেগা প্রকল্পের কাজ অব্যাহত থাকবে। হালকা প্রকৌশল শিল্পে কর অবকাশ থাকবে। রেমিট্যান্স প্রণোদনা আগের মতো থাকছে।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবকে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ স্বাগত জানিয়েছেন, তাঁরা বলছেন, এর ফলে ব্যবসা-অর্থনীতিতে গতি বাড়বে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অতিমারির প্রভাব-প্রতিক্রিয়া-করণীয় সম্পর্কে বাজেটে তেমন উল্লেখ নেই, কর্মসংস্থান নীতি নির্দেশনা স্পষ্ট নয়, কোভিড অভিঘাতে দরিদ্র হওয়া মানুষ, মধ্যবিত্তদের জন্য আশার বাণী নেই। তাঁরা বাজেটকে গতানুগতিক এবং বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জিং হবে বলছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, বাজেটের এক তৃতীয়াংশ ঘাটতি দেখানোর ফলে ঋণের বোঝা দেশবাসীর ওপর বর্তাবে। আয়ের উৎস বাড়াতে কর জাল কিছুটা বিস্তৃত করার কথা আছে বাজেটে, তবে দুর্নীতি, অপচয়, অব্যবস্থাপনা, কর ফাঁকি, অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ এসব প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। করোনার এই সময় নিত্যপণ্যের ঘন ঘন মূল্যবৃদ্ধি কম আয়ের মানুষকে অসহায় করে তুলেছে। এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন। কৃষিতে নানা সুখবর আছে, করোনাকালে কৃষিই আমাদের অনেকটা সুরক্ষা দিয়েছে। প্রবাসী রেমিট্যান্স, পোশাক শিল্প আমাদের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। করোনার অভিঘাত আমাদের স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতাগুলি স্পষ্ট করেছে। করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা জীবন-জীবিকা সচল রাখতে সহায়ক হয়েছে।
আমরা মনে করি, নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা, সুলভমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ, নানা উপায়ে শহর ও গ্রামের কর্মসংস্থান মানুষকে এই করোনার সময় কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। সরকারকে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।