হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ ও চিকিৎসা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

জটিল স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর একটি হার্টের রক্তনালীতে ব্লক হওয়া। যা হার্ট ব্লক নামে পরিচিত। ঠিক সময়ে ধরা না পড়লে এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এটি এমন একটি রোগ যা শুরুর দিকে বোঝা যায় না। কারণ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে ক্রমাগত এটি হার্ট বা হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করতে থাকে। ফলে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
হার্ট ব্লক কী?
আমাদের শরীরে অসংখ্য রক্তনালি। এদের কাজ হলো প্রতিটি কোষে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া। রক্ত সঞ্চালিত প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হৃৎপিণ্ড। এই অঙ্গটি ক্রমাগত সংকোচনের মাধ্যমে পুরো শরীরে রক্ত প্রবাহ করে।
হৃৎপিণ্ডের কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহের জন্য যেসব রক্তনালি রয়েছে তাদের করোনারি আর্টারি বলে। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালি যদি কোনো কারণে সংকুচিত হয়ে যায় কিংবা রক্তনালীতে কোলেস্টেরল জমে যদি রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে তবে হার্ট ব্লক হয়েছে বলা হয়। সহজ ভাষায় বলা যায়, রক্তনালিতে ঠিকমতো রক্ত চলাচল করতে না পারার পরিস্থিতিতে হার্ট ব্লক হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি করোনারি আর্টারি ডিজিস নামে পরিচিত।
হার্ট ব্লক কেন হয়?
রক্তনালি ব্লক বা হার্ট ব্লকের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। বংশগত কারণে রক্তনালির ব্লক হতে পারে। আবার ডায়াবেটিক রোগীদের যদি সুগারের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকে তা থেকেও রক্তনালিতে ব্লক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ধূমপান করেন এমন ব্যক্তিদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেক।
এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে। অনেকসময় এর পেছনে দায়ী থাকে বয়সও। রক্তনালি ব্লকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল। এই সমস্যা থাকলে রক্তনালির ভেতরে কোলেস্টেরল জমে ব্লক তৈরি করে। কিছু রোগ রয়েছে, যেগুলো শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ তৈরি করে। এসব রোগ থেকেও রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে।
হার্ট ব্লক হওয়ার লক্ষণ : প্রাথমিক পর্যায়ে হার্ট ব্লক বোঝা যায় না। তবে কিছু লক্ষণ রয়েছে যা দেখা দিলে সচেতন হওয়া জরুরি। এগুলো হার্ট ব্লকের লক্ষণ হতে পারে-
হার্ট ব্লক নির্ণয় করে কীভাবে?
হার্টের কিছু টেস্ট বা পরীক্ষার মাধ্যমে ব্লক নির্ণয় করা হয়। এগুলো হলো ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইটিটি ও এনজিওগ্রাম। এর মাধ্যমে হার্টের ব্লক বা রক্তনালির ব্লক নির্ণয় করা যায়।
হার্ট ব্লক দূর করার উপায় : রক্তনালির ব্লক বা হার্টের ব্লক হলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কার্যকর চিকিৎসা এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
ব্যায়াম ও খাবারদাবার : সুস্থ থাকতে সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করতে হবে। দ্রুত হাঁটাও ব্যায়ামের অংশ। হার্ট ভালো রাখতে চাইলে খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে ফলমূল, শাক-সবজি। মাংসের পরিমাণ কমিয়ে মাছ খেতে হবে বেশি। সামুদ্রিক মাছ হার্টের জন্য উপকারি। রান্নায় খুবই কম তেল ব্যবহার করতে হবে।
হার্ট ব্লকের মেডিসিন : সঠিক নিয়ম মেনে চললে অনেক কম ওষুধ খেয়েও হার্ট ব্লকের রোগীদের ভালো রাখা সম্ভব। কার কী ওষুধ প্রয়োজন সেটা নির্ভর করে রোগের তীব্রতার ওপর। এজন্য একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি পরিস্থিতি বুঝে মেডিসিন দেবেন।
স্টেন্টিং বা রক্তনালিতে রিং স্থাপন : হার্টের রক্তনালিতে চর্বি জমে অনেকসময় ব্লক হয়ে যায়। ফলে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। আর রক্ত ঠিকমতো না চলতে পারলে হার্ট ভালোভাবে কাজ করে না। এক্ষেত্রে হার্টের রক্তনালির ব্লকের স্থানে একটি রিং বসিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়।
নারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়তে পারে যেসব কারণে-
একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে কার ব্লকে রিং বসাতে হবে অথবা কার বসাতে হবে না। ইমার্জেন্সি হার্ট অ্যাটাকে এই স্টেন্টিং বা রিং স্থাপন একটি উন্নতমানের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা বলা যায়।
বাইপাস সার্জারি বা ওপেন হার্ট সার্জারি : যদি হার্টে ব্লকের পরিমাণ ও সংখ্যা অনেক বেশি হয় তখন অনেকসময় রিং স্থাপন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে ওপেন হার্ট সার্জারি করে, ব্লকগুলো বাইপাস করে বিকল্প রক্তনালি তৈরি করে দেওয়া হয়, যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকভাবে করতে পারে।
হার্ট ব্লক হলেই বাঁচার সম্ভাবনা কমে যায় এমন ধারণা ঠিক নয়। একজন দক্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ এবং জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা সম্ভব। সূত্র : ঢাকামেইল