হরতাল-অবরোধে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা

মহামারির কারণে টানা প্রায় দু বছর স্থবির ছিল দেশের শিক্ষা কার্যক্রম। শুরু হওয়ার পর অটো পাস পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ হয় শিক্ষার্থীরা। তারপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন শুরু হয়। আগামী বছর থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পূর্ণ সিলেবাসে ফেরার লক্ষ্যে নভেম্বরের মধ্যেই পরীক্ষা ও মূল্যায়ন শেষের কথা থাকলেও, নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধে আবারও অনিশ্চয়তায় পড়েছে শিক্ষা খাত। এসব কর্মসূচি ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে অভিভাবকদের। নিরাপত্তাহীনতায় কমেছে বিদ্যালয়ে উপস্থিতিও। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্য হয়ে শুক্র, শনিবার ক্লাস ও পরীক্ষা নিতে হচ্ছে।
হরতাল-অবরোধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানি বাণিজ্য। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন । নভেম্বরের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও, অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা। সহিংসতা বাড়লে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ‘অসম্পূর্ণ’ রেখেই শিক্ষাবর্ষের ইতি টানতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার বলে মনে করেন শিক্ষা গবেষকরা। গণশিক্ষার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন এক শিক্ষাবিদ বলেছেন, ‘দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। এটা নতুন হওয়ায় অনেকে তা বুঝে উঠতে পারছেন না। স্কুলে স্কুলে মূল্যায়ন হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অবশ্যই তা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।’
এক শিক্ষক বলেন, ‘অবরোধের কারণে অভিভাবকরা রাস্তায় যাতায়াত নিরাপদ মনে করছেন না। বছরের শেষ সময়ে তো স্কুল বন্ধও রাখা যায় না। আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা আছে, সামনে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি। এ সময়ে স্কুলের প্রশাসনিক অনেক কাজ থাকে।’
বেসরকারি একটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুপ্রভাত প্রতিনিধিকে বলেন, ‘হরতাল হলেও সবকিছু চলছে। এটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এরপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি হরতালে বন্ধ রেখে শুক্র-শনিবারে পরীক্ষা নিতো, তাহলে ভালো হতো।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক খাইরুল করিম বলেন, ‘আমরা সব মহলে অনুরোধ করেছি, শিক্ষার্থীদের যাতে কোনোভাবে যেন ক্ষতি না হয় সেভাবে কর্মসূচি রাখতে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া আছে- নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষের মধ্যে যেন পাঠ্যক্রম শেষ হয় সেভাবে ব্যবস্থা নিতে।’
বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধ যদি সফল হতো তা-ও না হয় মানা যেত কিন্তু বাস্তবে তো তা হচ্ছে না গতকালের সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, বিএনপির ডাকা হরতালের প্রভাব পড়েনি নগরজীবনে। পথে দেখা যায়নি হরতাল ডাকা নেতাকর্মীদের মিছিল বা কোনো কার্যক্রম। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, নগরজুড়ে বাস, টেম্পু, লেগুনা, যাত্রীবাহী পেট্রোলের অটোরিকশা চলাচল করেছে। স্বাভাবিক ছিল সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও অযান্ত্রিক রিকশা-ভ্যান চলাচলও। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যানজটও হতে দেখা গেছে।
মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার যখন সুযোগ এলো সেসময় হরতাল-অবরোধের মতো ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলাই সঙ্গত। তাছাড়া এ বছর থেকে নতুন পাঠক্রম চালু হওয়ার কথা। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সেটাও ব্যাহত হবে। কাজেই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আর্জি জানাতে চাই যে, রাজনীতি যদি মানুষের কল্যাণে করা হয়ে থাকে তাহলে মানুষের দুর্ভোগ হয়, অকল্যাণ হয়, মানুষের ক্ষতি হয় তেমন কর্মসূচি দেওয়া থেকে তারা যেন বিরত থাকে।