তালাক

জসিম মনছুরি »

ইদানিং কলহটা বেড়েই চলছে। কোন কথাবার্তা ছাড়াই ঝগড়া লেগে যায়। ভাত-কাপড়ের অভাব নেই। তবু দ্বন্দ্ব আর দ্বন্দ্ব। মুহিতকে দেখলে অনর্থক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে সীমা। সম্প্রতি দ্বন্দ্বের সীমাটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে । সীমার রাগটা দিন দিন বাড়ছে। কী কারণে এত রাগ কারণটা অজানা। মুহিতের ভাষ্য. মায়ের সাথে কথা বললে নাকি তার ভয়ংকর রূপটা প্রকাশ পায়। সীমার মা দস্যুপনার জন্য এলাকায় প্রসিদ্ধ। তার ভয়ে নাকি আকাশের কাক পর্যন্ত উড়তে পারে না। এলাকার সবাই তার ঝগড়ার ভয়ে তটস্থ থাকে। কখন কার জন্য কি বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাধায়, মুশকিল।
একবার ঝগড়া শুরু হলে অশ্লীল কথাবার্তা ও গালিগালাজ আষাঢ়ের অঝোর ধারার মত বর্ষণ হতে থাকে। আষাঢ়ের বৃষ্টি ক্ষণিক থামলেও থামে না তারামনির মন্দকথার ফুলঝুরি। সে বাল্যকাল থেকেই ঝগড়াটে, বদরাগী ও যথেচ্ছা জীবনাচরণে অভ্যস্ত। দস্যুপনার জন্য তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভাব হয়নি। স্কুল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর থেকে মূলত সে গৃহস্থালি কাজকর্ম করে বেড়ে ওঠে। পাড়ার তার চেয়ে অনেক জুনিয়র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেও মন্দস্বভাবের কারণে তারামনিকে কেউ বিয়ে করতে চায়নি। বিয়ের সম্বন্ধ আসলেও পাড়া-প্রতিবেশীর কানমন্ত্রে বরপক্ষ তাকে বউ করে নিতে রাজি হয় না। প্রতিবেশীরা বলে থাকে এটা মানুষকে কষ্ট দেওয়ার অভিশাপের ফল। কোনদিনই বাদ যায় না তারামনির ঝগড়া ছাড়া। ঝগড়া মানেই তারামনি। সেদিন তারামনি কল থেকে পানি আনতে যায়। গ্রামের কলগুলোতে সিরিয়াল মেন্টেন করে লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। সে লাইনের তোয়াক্কা না করে জোর করে দশজনকে ডিঙিয়ে পানি সংগ্রহ করে। লেগে যায় ঝগড়া
তারামনি : লাইন ছার, আঁই পানি লইয়্যম।
হাজেরা : আঁরা বউত আগেত্তুন লাইন ধরগি। তুই পরে আই আগে কেনে পানি লইবি?
তারামনি : আই লাইন ধরি পানি লইতাম? এগিন কি হইলি মাগির ঝি মাগি।
হাজেরও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। শুরু হয় ঝগড়া। চলে দুজনের অশ্লীল কথার তীরবর্ষণ। ফাসারা কথা দিয়ে একজন অপরজনকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। কথা থেকে মারামারি পর্যন্ত হয়। তারামনি ইটের আঘাতে হাজেরাকে রক্তাক্ত করে ফেলে। আটটি সেলাই দেওয়া হয়। সে ১৫ দিন মেডিকেলে থাকার পর সুস্থ হয়ে ফিরে আসে। গ্রাম্য সালিশে হাজেরার চিকিৎসা খরচ বাবদ তিন হাজার একশো টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয় তারামনির পিতা জাবেরকে। তারামনিকে ভরা মজলিসে ৫০বার কান ধরে উঠবস করানো হয়। এটা তারামনির জন্য নতুন কিছু নয়। আগেও অনেক ঝগড়াঝাটি সে করেছে। প্রতিবার তার ডাকুস্বভাবের জন্য ইজ্জত রক্ষার ভয়ে কেউ সালিশ দিতে সাহসী হয়নি। এরপর থেকে হাজরাকে জাবের কঠোর শাসনে রাখে। ঘর থেকে বের হলে কৈফিয়ত দিতে হয়। বলতে গেলে তারামনির বিয়ের বয়স অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। দুই-একটি সম্বন্ধ আসেনি, তা নয়। সম্বন্ধ আসলেও কনে দেখা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। তেমন একটা আগায় না। প্রতিবেশীরা তারামনির মন্দস্বভাবের কথা বরপক্ষকে নিজের টাকা খরচ করে ঘাটপার হয়ে বলে আসে। ফলে বিয়ে পর্যন্ত আগায় না ।
মাজেদ দাওরা পাস করেছে। শত কষ্টে অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে সে শিক্ষা সমাপ্ত করে। তার ফ্যামিলির সবাই ছিল অশিক্ষিত। ফ্যামিলির সবার প্রচেষ্টায় সে আজ মস্ত বড় আলেম হয়েছে। তার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। ভালোঘরের মেয়ে আনতে পারলেই হয়। মাজেদ ছিল মাঝারি গঠনের। ফরসা চেহারা দোহারা গড়নের। দেখতে মন্দ না। জাবের শিক্ষিত লোক। তিনিও চান তার দস্যি মেয়েকে ভালো ছেলের হাতে সোপর্দ করতে। তিনি প্রতিদিন খোদার দরবারে ফরিয়াদ করতে থাকেন। যাতে তার মেয়েটির শিগগির বিয়ে হয়ে যায়। হয়তো মহান আল্লাহ জাবেরের প্রার্থনা কবুল করেছেন। মাজেদরা তারামনির প্রতিবেশীদের কানমন্ত্র না নিয়ে বউ করে ঘরে নিয়ে আসে তাকে। মাজেদের পরিবার মহাখুশি শিক্ষিত ঘরের সুশিক্ষিত বউ ঘরে আনতে পেরে। বিয়ের ৬ মাসের মাথায় তারামনির আসলরূপ প্রকাশ পেতে থাকে। সে রূপ বীভৎস। সমাজ পরিপন্থী অসভ্যতা, নরকের প্রতিচ্ছবি। প্রতিনিয়ত তারামনির সাথে শাশুড়ির দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব একবার শুরু হলে মাসব্যাপী চলতে থাকে। শাশুড়িই প্রথম শুরু করে
শাশুড়ি : অডি ভালা মাইনশর ঝি, ঘুমত্তুন উড়িবিনে?
তারামনি : বুড়ি মাগী ইবার জ্বালায় আর তাইথ নঅ পাইরগুম পানলার। বহুত বড় মাগি।
শাশুড়ি: ভাত রাধিবি নে বেয়াক্কলের ছা বেয়াক্কল।
তারামনি : খানকির ঝি হাঙ্কি তুই রাঁন। আঁই নঅ পাইরগুম।
শাশুড়ি : ও খোদা, ইবা হন গজব আইনলাম।
এভাবে চলতে থাকে প্রতিনিয়ত তারামনি ও শাশুড়ির দ্বন্দ্ব। শাশুড়ি বয়স্ক লোক বিধায় যন্ত্রণায় অস্থির হলে গালিগালাজের মাত্রাটাও বাড়তে থাকে। তাতে তারামনির কিছু যায়-আসে না।? সে নিজেরটা নিজে খেতে পারলেই হয়। অন্যের চিন্তা সে করবে কেন? সে নিজেই রাজা নিজেই প্রজা তার রাজত্বে নম্রতা-ভদ্রতার কোন বালাই নাই। দয়ামায়ার লেশমাত্র নেই। কে কি বলল তাতে তার কিছুই আসে যায় না।
তারামনির একটি মাত্র কন্যা। মেয়েকে সে ইন্টার পর্যন্ত পড়িয়েছে। মেয়ে প্রাথমিক অবস্থায় ভালো স্বভাবের ছিল। তার কথাবার্তা আচার-আচরণগুলো মেয়ের ভালো লাগতো না। প্রথম দিকে মেয়ে মায়ের আচরণ ও অসভ্যতার বিরুদ্ধে দুচারটি কথা বললেও এখন আর বলার সাহস পায় না। সেবার মাকে বাধা দেয়াতে মায়ের ভাষা শুনে সে হতবাক হয়ে যায়। তারামনির সাথে পার্শ্ববর্তী বজলের দ্বন্দ্ব হচ্ছিল। মাকে সীমা নিষেধ করাতে মা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে।
সীমা : মা তুমি এগুলো কি করছো? এসব বন্ধ কর ।
তারামনি : তুই ইতারে জামাই লঅগই। বেশ্যা, তুই ইতার সাথে চুদাচুদি গরোছ নাকি? নইলে তোত্তুকা জ্বলের?
রাগের সময় কাকে কি বলে হুঁশ থাকে না তারামনির। যথেচ্ছা বলে যায়, সভ্যতা-ভব্যতার ধার ধারে না। প্রতিবেশীরা কেউ মন্দকথা বললে তাকে তারামনির উপমা দিয়ে থাকে। সীমা সেই তারামনির সন্তান। তার মাঝে রাগ-ক্ষোভ-অশ্লীলতা অসভ্যতা থাকতেই পাওে, এটা তেমন দোষের ব্যাপার না। মুহিত কোন খোঁজখবর না নিয়ে সীমাকে বিয়ে করেছিল। খোঁজখবর না নেয়াটা তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফল সে এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ইদানিং দ্বন্দ্বটা বেড়েই চলছে। কোন কথা ছাড়া দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ঝগড়াটা সীমাই শুরু করে।
সীমা : আঁই আর ভাত-তাঁত রাঁধিত ন অপাইরগুম। হাম গত্তে গত্তে মরি যাইত ন অইপাইরগুম।
মুহিত : তুই রাঁধিত ন অপাইরল্লে তোর মায়ে রাঁধিবো নাকি?
সীমা : তোর মারে রাইনতে হঅ, চোদানির পোয়া।
মুহিত : আই আরোগ্গা বিয়া গইরগুম।
সীমা : তুই তোর মারে বিয়া গর।
মহিত এ কথা শোনার পর নিজেকে আর কন্ট্রোল করে রাখতে পারলেন না। সারাদিন কষ্ট করে ঘামে ভিজে রোদে পুড়ে প্রশান্তির জন্য ঘরে এসেই বউয়ের এহেন কথাবার্তায় সে আর স্থির থাকতে পারলো না। অগত্যা সে বলে ফেলে, তুই তোর মায়ের মতই হইউস। তোরে আজিয়েত্তুন আঁত্তে দরকার নাঈ। এক তালাক দুই তালাক তিন তালাক …